সব দুর্নীতির পূর্ণ তদন্ত চায় বিসিবি

খেলাধুলা ডেস্ক:

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) খেলা নেই। সঙ্গে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ক্যাম্প চলছে সিলেটে। ফলে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল না তেমন কোনো ব্যস্ততা। এমন দিনেই দুপুর ১২টার দিকে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি কার্যালয়ে হাজির দুর্নীতি দমন কমিশনের তিন সদস্যের তদন্ত দল। সুনির্দিষ্ট তিন অভিযোগের ভিত্তিতে বিসিবি কার্যালয়ে অভিযান চালাতে আসেন তারা। অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন গণমাধ্যমকে জানান, দুটি আর্থিক বিষয়সহ মোট তিনটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন তারা।

দুদক কর্মকর্তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা বিসিবির বিভিন্ন বিভাগে অভিযান চালানো শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। দুদকের এ অভিযানে বিসিবির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানান বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। এ ছাড়া বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু আমার দেশকে বলেন, ‘দুদক যে যে বিষয়ে চাইবে, তদন্ত করতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে তদন্তকাজে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা হবে। আমরা চাই সব দুর্নীতির পূর্ণ তদন্ত হোক।’

বিসিবিতে অভিযানের আগে সংবাদমাধ্যমে বার্তা পাঠায় দুদক। সেখানে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে বিভিন্ন ক্রিকেট লিগের বাছাই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ অর্জনসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের নিমিত্তে টিম প্রেরণ’। পরে সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পরিচালক আল আমিন অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানান, বিপিএলে টিকিট বিক্রির আয়ে অসংগতি ও মুজিব শতবর্ষে অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত অভিযোগের পাশাপাশি গত ১০ মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফিকেশন লিগে অংশ নেওয়া দলগুলো যথাযথ নিয়ম মেনেছে কি না এবং অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা কমে যাওয়া ও এন্ট্রি ফি বাড়ানোর পেছনে কোনো প্রভাব আছে কি না- তা খতিয়ে দেখছে দুদক।

২০১৪-১৫ মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফিকেশন লিগে এন্ট্রি ফি ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার পাশাপাশি যুক্ত হয় কঠোর নিয়ম। ফলে অংশগ্রহণকারী ক্লাবের সংখ্যা রাতারাতি কমে যায় এবং ২০২৩-২৪ মৌসুম পর্যন্ত কোনোবারই ৫টির বেশি ক্লাব অংশ নেয়নি। ক্লাবগুলোর দাবি ছিল বাড়তি এন্ট্রি ফি ও নিয়মের কারণে অংশ নিতে পারেননি। চলতি মৌসুমে নিয়মনীতি শিথিলের পাশাপাশি এন্ট্রি ফি কমিয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে এ মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফিকেশন লিগে অংশ নিয়েছে ৬০টি ক্লাব। আওয়ামী লীগ আমলের বেশিরভাগ সময় বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নাজমুল হাসান পাপন। তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত আরেক পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকই মূলত নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট। তার পরামর্শেই বিসিবি নির্বাচনে ভোট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফিকেশন লিগে এতো কঠোর হয়ে ওঠে বিসিবি। এমনটাই অভিযোগ ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে।

এ নিয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, ‘তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে এবার ৬০ দল অংশ নিয়েছে। আগে ২-৩ বা সর্বোচ্চ ৪ দলের লিগ হতো। এখানে হয়তো কোনো কারণ আছে। আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা বোর্ডের কোনো প্রভাব ছিল কি না দেখার জন্য।’ এ ছাড়া বিপিএলের টিকিট বিক্রির আয় নিয়ে থাকা অসংগতি নিয়ে তদন্ত করবে দুদক।
চলতি বছর বিপিএলের ১১তম আসর শেষে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, এবার টিকিট বিক্রি থেকে বিসিবি আয় করেছে ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের ১০ আসরে টিকিট বিক্রি থেকে এই আয় ১৫ কোটি ছিল বলেও জানান তিনি। টিকিট বিক্রির আয়ে কেন এমন অসংগতি- সেটাও খতিয়ে দেখছে দুদক। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, ‘আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে টিকিটের ব্যাপারে চুক্তি করা হতো। তারা টিকিট বিক্রি করে বিসিবিকে একটা অংশ দিত। গত ৩-৪ আসরে বিসিবি নিজেরা টিকিট বিক্রি করছে। একাদশ আসরে আমরা দেখেছি ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আট বছরে যেখানে ১৫ কোটি, এক বছরেই ১৩ কোটির রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি।’ বিপিএলের শুরু থেকে ১০ম আসর পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ সোহেল। সে সময়ে বিসিবির টিকিট কেলেঙ্কারির জন্য অভিযোগের তীর মূলত তার দিকেই। এ ছাড়া এই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইসমাইল হায়দার মল্লিক।

২০২০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয় পুরো দেশে। বিসিবিও ওই উৎসবে শামিল হয়। কনসার্টসহ পুরো আয়োজনের জন্য ১৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও মূল খরচ ছিল ৭ কোটি। এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা অসংগতি পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া কনসার্টের টিকিট বিক্রি বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকার কোনো হিসাব দুদক পায়নি। অন্যান্য অভিযোগের মতো এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষের ব্যয়ের হিসাবে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। কনসার্টসহ যে আয়োজন হয়েছিল, সেখানে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। তবে আসলে খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মতো। এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বা কিছু করা হয়েছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিসিবির অর্থ বিভাগের কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়েছি। এছাড়া টিকিট বিক্রির দুই কোটি টাকাও এখানে দেখানো হয়নি। তাই এখানে টাকা আত্মসাতের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।’

Share