জাপা নিষিদ্ধ চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বিভিন্ন দলের

ডেস্ক রিপোর্ট:

জাতীয় পার্টি (জাপা) নিষিদ্ধসহ তিন দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। এজন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। একই সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন নেতারা।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ ও সংহতি সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় দাবি তুলে ধরে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রয়োজনে যমুনা ও সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।

জাতীয় পার্টি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে, ডিজিএফআই আবার জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদল বানানোর জন্য চক্রান্ত করছে। এ চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় জাপা মিছিল করছে, মিটিং করছে। আমাদের ওপর হামলা করেছে।

নুরুল হককে সেনাসদস্যরা বুট জুতা দিয়ে পাড়িয়েছেন দাবি করে রাশেদ বলেন, গতকাল আমরা সংবাদ সম্মেলন শুরু করতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তার আগ মুহূর্তে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আর আমাদের সভাপতিকে কীভাবে নির্মমভাবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিটিয়েছে এবং সেনাবাহিনী বুট দিয়ে তাকে পাড়িয়েছে, সেটি আপনারা ভিডিওতে দেখেছেন। আমাদের কী অন্যায়?

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কাউকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকেই লড়াই-সংগ্রাম করছি। আমরা বারবার বলছি, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে আমরা এ দাবিও করছি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কাউকে রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেনÑজেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ খান, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন, তরিকুল ইসলাম, হাসান আল মামুন, নুরুল হকের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী আমার দেশকে বলেন, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ সহ্য করা হবে না। যে দলেরই হোক না কেন, অপরাধ করলে ছাড় নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় বিজয়নগর থেকে গণঅধিকার পরিষদ ও পল্টন থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জাপা কার্যালয়ের সামনে আসেন। এ সময় এ উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রায় ১৫ মিনিটের বেশি সময় উত্তেজনার পর গণঅধিকার পরিষদের নেতারা তাদের কর্মীদের সরিয়ে নেন। এর কয়েক মিনিট পরই কয়েকজন লোক পেছন দিয়ে এসে জাপা কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে সামনে ভাঙচুর করে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কার্যালয় থেকে চেয়ার-টেবিল বের করে বাইরেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরবর্তী সময়ে সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

এর আগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিকালে বিজয়নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন দলের নেতাকর্মীরা। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি পল্টন, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, কাকরাইল হয়ে নাইটিংগেল মোড় দিয়ে বিজয়নগরের দিকে আসে।

Share