ডেস্ক রিপোর্ট:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণ ম্যান্ডেট দিলে গুমের সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন করার জন্য আইন প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা অ্যাকাডেমির সাহিত্যবিশারদ আব্দুল করিম অডিটোরিয়ামে ‘Repression to Revolution: Exposing Systematic Human Rights Violations by the State’ শীর্ষক আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ফটোটাও আজ এখানে থাকার কথা ছিল, কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি জীবিত দাঁড়িয়ে আছি। নেত্র নিউজ যে জায়গার নাম দিয়েছিল আয়নাঘর, সেখানে কোনো আয়না ছিল না—ছিল মৃত্যুর যম। ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের পর আমাকে এমন এক গোপন নির্যাতনকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রুম ছিল মাত্র ৫ ফুট বাই ১০ ফুট। চোখ বাঁধা অবস্থায় রাখা হতো, ছিল একটি ছোট নালা, প্রস্রাব-পায়খানার ছিদ্র, একটি ট্যাপ, পাতলা কম্বল ও বালিশ। বিচ্ছুও আসত সেই ঘরে।
তিনি বলেন, ৬১ দিনের মাথায় তাকে জানানো হয়েছিল এমন জায়গায় নেওয়া হবে যেখান থেকে ফেরা কঠিন। তখন তিনি অনুরোধ করেছিলেন, মারা গেলে লাশ যেন পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সালাহউদ্দিন আরো বলেন, আমরা সেই বাংলাদেশের অপেক্ষা করছি, যেখানে আর কাউকে গুম হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না।
জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২৪ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে ১,৪০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি আহত হয়ে অনেকেই পঙ্গু ও অন্ধ হয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী গুমের সংখ্যা ছিল ৭০৯ জন। তবে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটনের মতে, গুম কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ১,৮৫০ জনে পৌঁছেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, গুম সংক্রান্ত অনেক তথ্যই আগে প্রকাশিত হয়নি। থানায় আমার স্ত্রীর করা অভিযোগও গ্রহণ করা হয়নি। পরিবেশের কারণে আসল সংখ্যা প্রকাশ পায়নি।
এছাড়া নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৬ বছর ধরে মানুষ ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন করছে। নির্বাচনকে ঘিরে কোনো দল যেন ধোঁয়াশা তৈরি না করে সে আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের মধ্য দিয়েই জাতির প্রত্যাশা পূরণের পথ তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (৩০ আগস্ট) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১১ সাল থেকে এ দিবস পালন শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক গুম বিশেষ করে স্বৈরশাসন ও রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ঘটে থাকে। এতে পরিবারগুলো প্রিয়জনের খোঁজ পায় না এবং ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হয়।