যাচাই-বাছাই ছাড়াই মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ: দুদক

ডেস্ক রিপোর্ট:

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর মঙ্গলবারের একটি পোস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন বলে দুদক দাবি করেছে।

মঙ্গলবার রাতে দুদকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ বিষয়ে দুদকের বক্তব্য, একটি প্রতারকচক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোন সম্পর্ক নেই। দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

ইতোপূর্বে দুদক প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করে আসছে। যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

দুদক জানায়, এরূপ প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করে, যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। দুদক কর্তৃক যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত অনুসন্ধান বা তদন্ত চলাকালে দুদকের কোন কর্মকর্তা যেকোনো অনৈতিক প্রস্তাব দিলে তা দুদককে জানানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

সংস্থাটি জানায়, দুদকের কোন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে কারো কাছে থেকে টাকা চাওয়া হলে কিংবা এ সংক্রান্ত বিস্তারিত ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য অথবা প্রতারণা বা অনিয়মের কোন তথ্য পাওয়া গেলে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ নম্বরে অথবা chairman@acc.org.bd এই মেইলে জানালে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে। এ ধরণের অভিযোগ যাতে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান বা তদন্তে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ফেলতে না পারে তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়াও প্রতারণামূলক কোন ফোন কল, বার্তা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে জানানোর অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতুর কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তা ঘুস চেয়েছেন বলে দাবি করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’

মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি করেন হাসনাত। ওই পোস্টের সঙ্গে তিনি তিনটি ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করেছেন।

‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা’ শিরোনামে পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে এক লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা-পয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’

তিনি লেখেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি এক লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চান টাকা দেবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করাদের কাছে থেকেই যদি এক লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘দুদকের এসব কাজকারবার এই প্রথম না। শেখ হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য এক লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুস দেন নাই। কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই, দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দেন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন? ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই।’

হাসনাত বলেন, ‘শেখ হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরোনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’

Share