ডেস্ক রিপোর্ট:
মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের দোসরদের কেউ অংশ নিতে পারবে না। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে। এতে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের প্রাক্কালে রাজধানীসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে না ফ্যাসিস্টরা
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মহান বিজয় দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে না পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সদস্য ও তাদের দোসরদের কেউ। এ বিষয়ে বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, বিজয় দিবস উদযাপনে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ওইদিন যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে দেশপ্রেমিকদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। সেইসঙ্গে ওইদিনের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যাতে কোনোভাবেই বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের কেউ অংশ নিতে না পারে সেদিকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার এ প্রস্তাবের ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অভিমত তুলে ধরেন। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট ও তাদের দোসরদের কেউ যাতে অংশ না নিতে পারে, সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করবে।
জাতীয় পার্টি ও দলটির নেতা জিএম কাদেরের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, জাতীয় পার্টি ও দলটির নেতারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিল। আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা এবং ভোটারবিহীন তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পেছনে এ দলটির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ভারত থেকে ফিরে জিএম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ভারতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে ভারতের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’ তার এ বক্তব্য নিয়েও বৈঠকে কথা হয়।
আলোচনার এজেন্ডায় শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া ফাঁসির রায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, রায়ের আগে ও পরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এ বিষয়ে বৈঠকে স্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানানো হয়।
বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রায়ের আগের কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থানে কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ও দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের কাছ থেকে টাকা পেয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বৈঠক শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে দেশে কোনো অস্থিরতা নেই। সবই স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মহান বিজয় দিবস-২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নকল্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিজয় দিবস নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন নেই। আগে যেভাবে সব কর্মসূচি হয়েছে, এবারও সেভাবে হবে। বরং আরো বেশি হবে। তবে গতবারের মতো এবারও প্যারেড হবে না।