ফ্যাসিবাদী আইনের অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ মানবে না

ডেস্ক রিপোর্ট:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ছাত্র-জনতা যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গত বছর বিপ্লব করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই ঘোষণায় তার প্রতিফলন ঘটেনি। অবিলম্বে এ ঘোষণা সংশোধন করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণা ও সংস্কারকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদী আইনের অধীনে কোনো নির্বাচন এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

রোববার বিকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র এবং জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত স্বীকৃতি প্রদান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পিআর আর সংস্কারকে গণভোটে ছেড়ে দিন। নির্বাচন কবে হবে তা-ও গণভোটে দিন। জনগণ যা বলবে সেটাই মানতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে দেশের প্রধান দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ছাড়া জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ ঐক্যবদ্ধ। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে চব্বিশের মতো আরেকটি বিপ্লব হবে।

ডা. তাহের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিএনপিকেও আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধানে আসার আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সেমিনারে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কালোটাকা ও পেশিশক্তি থাকবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, যে জুলাই ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে আমরা হতাশ। অবিলম্বে এটি সংশোধন করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তার জন্য নির্বাচনের আগেই আইনিভিত্তি দিতে হবে।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, ভোট ডাকাতি, দিনের ভোট রাতে করার ধারা বন্ধ করতে পারে পিআর পদ্ধতি। আমরা জামায়াতসহ সবাই পিআর নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো-এ সংস্কার কমিশন তা এজেন্ডায় আনেনি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ সম্মেলনে যা বলবে, তাই হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসাইন বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র সরকার নিজের মতো করে ঘোষণা করেছে, এটা আশাব্যঞ্জক নয়। নতুন বাংলাদেশের যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, সেগুলোকে টেকসই করতে নতুন সংবিধানের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী জুলাই ঘোষণা ঠিক করতে হবে। জুলাই সনদ যদি বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি না দেওয়া হয়, তাহলে জুলাই বিপ্লব ছিনতাই হয়ে যাবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম সরকারকে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিতে পারলে আপনারা অবৈধ হয়ে যাবেন। আপনারা কেন তা বুঝছেন না? পেছনে কারা কলকাঠি নাড়ছে জনগণ জানতে চায়।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদী কোনো শাসন জনগণ আর এ দেশে আসতে দেবে না।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। সংস্কারকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। হাসিনার ফ্যাসিবাদী আইনের অধীনে কোন নির্বাচন হতে দেব না।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির বলেন, বর্তমান অবস্থায় কোনোক্রমেই কোনো নির্বাচন সঠিক হবে না, বৈধ হবে না। এতে আবার স্বৈরাচার চড়াও হবে।

এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নিয়ামুল বশির বলেন, বঙ্গভবন থেকে চুপ্পুকে সরাতে হবে। শেখ হাসিনার ছায়া যেখানে থাকবে, সেখানেই তা শেষ করে নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরির পর নির্বাচন দিতে হবে।

জাতীয় সংস্কার জোটের আহ্বায়ক মেজর (অব.) আমিন আহমেদ আফসারী, দেশকে দালাল ও চাঁদাবাজমুক্ত না করা পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে পারে না। হলে সেটা হবে অপনির্বাচন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম জিয়াউল হাসান জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দেওয়ার দাবি আদায়ে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে জামায়াতকেই ভূমিকার আহ্বান জানান।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. কোরবান আলী বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গ্যারান্টির জন্য আইনি ভিত্তি প্রয়োজন। এজন্য জনগণের মতামত নেওয়া যেতে পারে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে আবারও ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমরা এ মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদ জন্ম হতে দিতে পারি না।

গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি ও মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, যে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে, তারা যদি একটি দলের প্রতি হেলে যায়, তাহলে আমরা এটা মেনে নেব না, হতেও দেব না। এ সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া আমরা এক চুলও নড়ব না।

খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, জুলাই ঘোষণায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এটি সংশোধন করুন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন।

Share