আ. লীগের দোসর ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪৪ আমলার তালিকা প্রকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট:

জুলাই অভ্যুত্থানে গুলির নির্দেশদাতা ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেট এবং ফ্যাসিস্টের দোসর ৪৪ আমলার তালিকা প্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে একটি সংগঠন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সংগঠনটি গত আগস্টে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা ৩১ মের মধ্যে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালনের হুমকি দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

জুলাই ঐক্য প্রকাশিত তালিকায় গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে যেসব ম্যাজিস্ট্রেটের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন— ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার উজ্জ্বল কুমার হালদার, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর অমিত কুমার সাহা, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার আফরিন জাহান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শামসুজ্জাহান কনক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার সোনিয়া হোসেন জিসান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, বর্তমানে টাঙ্গাইলের ধনবাড়িতে এসি ল্যান্ড হিসেবে কর্মরত সায়েম ইমরান, বর্তমান নারায়ণগঞ্জ সদরের এসি ল্যান্ড হিসেবে কর্মরত সাদিয়া আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান রাসেল, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের আত্মীয় ছাত্রলীগ নেতা, বর্তমানে ডেমরার এসি ল্যান্ড জাকির হোসেন, বর্তমানে মাদারীপুরের শিবচরের এসি ল্যান্ড শাইখা সুলতানা প্রমুখ। জুলাই আন্দোলনে এসব কর্মকর্তা গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে সরাসরি জড়িত বলে দাবি করেছে জুলাই ঐক্য।

এ ছাড়া বাকিদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন জুলাই ঐক্যর একাধিক নেতা।

এদিন স্বৈরাচারের সহযোগী আমলাদের তালিকাও প্রকাশ করে জুলাই ঐক্য। তালিকায় রয়েছেন— পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়া, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইব্রাহীম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোকাব্বির হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মুশফিকুর রহমান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব আব্দুর রহমান খান, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান মজুমদার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রুহুল আমিন, দুর্নীতি দমন কমিশন সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান (সচিব) আমিন উল্লাহ আহসান, বিপিএটিসি রেক্টর (সচিব) সাইদ মাহবুব খান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির (সচিব) রেক্টর ড. শহিদুল্লাহ, সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) ড. ওমর ফারুক, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরিন আফরোজ, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (চুক্তিভিত্তিক) জয়নুল বারী, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান (চুক্তিভিত্তিক) মুসলিম চৌধুরী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আশরাফ উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (সচিব) শরিফা খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়রা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব জাহেদা পারভীন, ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য এ এম আকমল হোসেন আজাদ ও ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (সংযুক্ত) সচিব মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসাইন খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাহদুর রহমান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র, স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আব্দুল কাইয়ুম; জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে চুক্তিভিত্তিক মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফফর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ বশিরুল আলম, ওয়াশিংটন ডিসির ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) কাজী এনামুল হাসান ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্য বেশকিছু দাবি উত্থাপন করে। সেগুলো হলো— ৩১ মের মধ্যে তালিকায় উল্লিখিতদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে; তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে। দেশের তথ্য পাচারকারী, ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী ও সহযোগিতাকারী সব আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সবার ব্যাংক হিসাব এবং অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে। স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সব স্বৈরাচারের দোসরের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না, আগামী ৩১ মের মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে। ৩১ মের মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছে এবং কতজন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছেন, তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক এ বি জুবায়ের, মোসাদ্দেক আল ইবনে মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ। এ সময় ৪৪ সরকারি আমলার তালিকা উপস্থাপন করেন জুলাই শহীদ মুনতাসির রহমানের বাবা সৈয়দ গাজীউর রহমান। ৯৫ ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা উপস্থাপন করেন একতা বাংলাদেশের আহ্বায়ক তারিক প্লাবন।

Share