আওয়ামী বর্বরতা আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো ছিল

ডেস্ক রিপোর্ট:

আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ছিল নব্য জাহেলিয়াত। এ দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের দেড় দশকের বর্বরতার সঙ্গে আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়ের নির্মমতার সদৃশ আছে। এমন দানবীয় শোষণের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না জনগণ। তাই শাপলা চত্বরের চেতনা সর্বত্র তুলে ধরা জাতির ঐতিহাসিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে কোথাও ঘাটতি দেখা দিলে তা পূরণে ভূমিকা পালন করবে শাপলা স্মৃতি সংসদ।

শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শাপলা স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ‘শাপলাকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজে অংশীজনের সম্মাননা ও সম্মিলনী ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও শাপলা স্মৃতি সংসদের সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক বলেন, শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোতেই চব্বিশের চেতনার ধারা শুরু হয়েছে। জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলার কথা আসেনি—এ দায় যেমন ড. ইউনূসকে নিতে হবে, তেমনি পুরো অন্তর্বর্তী সরকারকেও নিতে হবে।

তিনি বলেন, শাপলার চেতনাকে আগামীর বাংলাদেশের মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্যই শাপলা স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাপলার শহীদ পরিবারের অভিভাবকত্ব গ্রহণের জন্য গঠিত হয়েছে শাপলা শহীদ গার্ডিয়ানস ফোরাম। আগামীর বাংলাদেশে জুলাইকে মূল্যায়ন করা মানেই শাপলাকেও মূল্যায়ন করা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে ধরে রাখতে এবং আরো সুসংহত করতে বড় দল হিসেবে বিএনপিকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। কোনো কারণে জাতির এ ঐক্য বিনষ্ট হলে এজন্য জাতির কাছে বিএনপি দায়ী থাকবে।

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের আলেম সমাজকে ভিন্নভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। এখন তা পাল্টে গেছে। এ দেশে ফ্যাসিবাদ যাতে আর কোনোদিন ঠিকানাও খুঁজতে না পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ (পীর মধুপুর) বলেন, শাপলার শহীদরা আমাদের ঈমানি শক্তির প্রতীক। তাদের আত্মত্যাগকে ধারণ করেই ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, শাপলার ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার ঘটনা। বাহাত্তরের পর থেকে দেশের চালক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু দেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংবিধান পরিবর্তন না হলে আবারও শাপলা ফিরে আসবে, আবারও ১৮ ফিরে আসবে, আবারও ২৪ ফিরে আসবে।

বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন বলেন, ইসলামের তাহজিব ও তমদ্দুন রক্ষায় আপনাদের বজ্রকণ্ঠ যতদিন থাকবে, ততদিন এ দেশে ইনসাফ থাকবে। ভিপি নূরের রক্ত বৃথা গেলে আগামী দিনে দাড়ি-টুপিওয়ালাদের জন্যও অপমান অপেক্ষা করছে।

মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, শাপলা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করা এখন জরুরি দায়িত্ব।

দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান শিব্বির মাহমুদ বলেন, মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দিগন্ত শাপলার সত্য তুলে ধরেছিল। এজন্য আজকের এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য গৌরবের।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের সহ-অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, যুব মজলিস সভাপতি মাওলানা জাহিদ জামান, জবানের সম্পাদক রেজাউল করিম রনি প্রমুখ।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন, মাওলানা আল আবিদ শাকির ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মিসবাহ, চট্টগ্রাম কোর্টের অতিরিক্ত পিপি রিয়াদ উদ্দীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা বশিরউল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম, লেখক গবেষক মাওলানা মনযুর আহমদ, মাওলানা আলী হাসান তৈয়্যব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ, যুব মজলিস সভাপতি জাহিদুজ্জামান, মাওলানা মুর্শিদুল আলম সিদ্দিকী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা জাকির হোসাইন, মাওলানা আফসার মাহমুদ, ফাতেহ সোলায়মান, সাখাওয়াত হোসাইন, মুফতি সাঈদ আহমদ, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, ইবরাহীম জামিল, মাওলানা আবদুল হক শামীম প্রমুখ।

সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান

অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, হতাহতদের চিকিৎসাসেবা, আইনি সহায়তা ও মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখার জন্য প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, আলজাজিরা, ইসলামিক টেলিভিশন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ও হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরকে (২০১৩ সালের কমিটি)।

এছাড়া গণমাধ্যম, আইন ও মানবাধিকার, চিকিৎসাসেবা, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং পুনর্বাসন সহায়তা খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশজনকে ব্যক্তিপর্যায়ে সম্মাননা ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা তুলে দেন শাপলা চত্বরে শহীদ হওয়া মতিউর রহমান, মুক্তার মিয়া ও ইউনুছ আলীর গর্বিত বাবারা।

Share