সরদার আনিছ:
উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা অনেক কম থাকায় দেশের বাজারে এবার আলুর দাম নিম্নমুখী। অন্যান্য সবজির দাম বাড়লেও আলুর দাম প্রতিদিনই কমছে। এতে আলুচাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেক কৃষক আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন, কিন্তু বাজারে দাম কমে যাওয়ায় তারা আলু তুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে কৃষকদের পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ মালিকরাও বিপাকে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার সরকার আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছে।
রাজধানীর গাবতলীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন গবেষণা ও প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সাংবাদিকদের বলেন, “এবার আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। কৃষকদের ক্ষতি কমাতে সরকারিভাবে আলু ক্রয় করা হবে।” তিনি জানান, কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে আলুর দাম নির্ধারণ করতেও সরকার কাজ করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে দেশে এক কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা অনেক কম থাকায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চার লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ বেশি। এতে উৎপাদনও ৯ শতাংশ বেড়ে এক কোটি ১৫ লাখ টনে পৌঁছেছে। আগের বছর উৎপাদন ছিল এক কোটি ছয় লাখ টন।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১০ লাখ টন আলু বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সব মিলিয়ে দেশীয় চাহিদা ৯০ লাখ টনের কিছু বেশি। এর মধ্যে ভোক্তা চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ টন, যার একটি অংশ প্রক্রিয়াজাত করে চিপস ও ক্র্যাকার্স তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ৬২ হাজার টনের কিছু বেশি আলু রপ্তানি হয়েছে।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আলু রোপণ করা হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ পর্যন্ত মূল মৌসুমে আলু তোলা হয়। তবে শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে পুরোনো আলুর চাহিদা কমে যায়। বিসিএসএ জানিয়েছে, বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে ২৯ লাখ টন আলু মজুত আছে, যার মধ্যে মাত্র চার লাখ টন বাজারে ছাড়া হয়েছে।
বিসিএসএ পরিচালক ও হাসেন কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী হাসেন আলী বলেন, “এবার বিপুল পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থেকে যেতে পারে। বাজারে দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম, তাই কৃষকরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।” তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ১৪-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ দাঁড়াচ্ছে ২৫-২৭ টাকা।
বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্যমতে, ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৫-৩০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। রপ্তানি এবার উল্লেখযোগ্য নয়।
চাহিদা বাড়াতে বিসিএসএ সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিল খাদ্যবান্ধব ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি করে আলু বিতরণের জন্য। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সরকার আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা।