টিআর কাবিখায় গরিব লোক গরিবই থেকে যাচ্ছে: ত্রাণ উপদেষ্টা

ডেস্ক রিপোর্ট:

টিআর-কাবিখা প্রকল্পের টাকায় অনেকের পকেট ভারী হলেও গরিব লোক গরিবই থেকে যাচ্ছে। ফলে অপচয় রোধে টিআর, কাবিখার ২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বুধবার সচিবালয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

https://c9096dbcee9bdb9ccf67921490b758cb.safeframe.googlesyndication.com/safeframe/1-0-45/html/container.html

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, টিআর কাবিখায় অনুরোধের বিশেষ বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। অপচয় রোধে গত বছর টিআর, কাবিখার ২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে কাবিখার ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা আর টিআর খাতের ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা।

ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট যখন আমরা শপথ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসি, ততক্ষণে অর্থবছরের প্রায় তিন মাস চলে গেছে।

ফারুক-ই-আজম বলেন, ওই সময় আমি টিআর (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি) এবং কাবিখার (গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে সারা দেশে প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের তথ্য মতে জানতে পারলাম এই মুহূর্তে প্রজেক্ট দিয়ে বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করা যাবে না। সেজন্য টাকাগুলো সরকারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো সংরক্ষণ কর্মসূচি-টিআর এবং কাবিখার বিশেষ বরাদ্দ সংকুচিত করায় দুর্নীতি ও অপচয় কমেছে এবং বরাদ্দে আঞ্চলিক সমতা আনয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভুয়া প্রকল্প বা একই প্রকল্প দিয়ে বার বার যেন গ্রামীণ পর্যায়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করতে না পারে, সেজন্য ২০২৪ সালের ৮ আগস্টের পর প্রতিটি উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) কে গণহারে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।

একইসাথে নতুনভাবে পদায়ন হওয়া পিআইওদের কাছে তার উপজেলার আগের পিআইওদের সমস্ত প্রকল্পের তালিকা নেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডাটাবেজে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে কেউ আর একই প্রকল্প বার বার দেখিয়ে টাকা বরাদ্দ নিতে পারবে না।

উপদেষ্টা বলেন, ধরুন গ্রামের দরিদ্র ১০ জন মানুষকে ১০ দিনের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা করে মজুরিতে মাটি ভরাট বা নালা খননের কাজ দেওয়া হলো। সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, স্থানীয় কোনো প্রভাবশালী নেতা সেই গরিব ১০ জনের ১০ দিনের কাজ মেশিন (ভেকু) দিয়ে আধা ঘণ্টায় নালা খনন করে ফেলল। তাহলে যেই গরিবদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলো, তারা তো আর টাকাটা পেল না। তবে সেখানেও দেখা যায়, গরিবদের ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে হয়তো তাদেরকে উপস্থিত দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়। বিপরীতে গরিবরা পেল মাত্র ১০০ টাকা। অর্থাৎ যেখানে একজন গরিব মানুষ ১০ দিন কাজ করে ৫ হাজার টাকা পেত, আইডি কার্ড নিয়ে তাকে একশত টাকা ধরিয়ে দেওয়া হলো।

উপদেষ্টা বলেন, অনেকের ধারণা, টিআর-কাবিখা দিয়ে গ্রামীণ সমাজে অর্থনীতির পরিসঞ্চালন ঘটে। কিন্তু বর্তমান অবস্থা হলো এতক্ষণ আমি যা বললাম। অর্থাৎ গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থানের পরিবর্তে এখন হচ্ছে ধনীদের আরো ধনী হওয়া। এই সব প্রকল্পের টাকায় হয়তো ইউএনও, পিআইও, ইউপি চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো নেতার পকেট ভারী হচ্ছে। গরিব লোক গরিবই থেকে যাচ্ছে।

Share