মামদানির জয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষী প্রতিক্রিয়া কেমন, কী ভাবছেন মুসলিমরা?

বছরের পর বছর ধরে, নিউইয়র্কের মুসলমান বাসিন্দারা ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এর মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটির ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে।

তবে চলতি বছর (২০২৫ সাল) ডানপন্থী প্রভাবশালীরা ঈদের নামাজের ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে আক্রমণ করে।

মামদানির সমর্থক স্থানীয় ইতিহাসবিদ এবং মুসলিম আমেরিকান কর্মী আসাদ দান্দিয়া বলেন, ‘ভয় দেখানো পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। কারণ এখানকার মুসলমানরা জানে, আমাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমনরা জানিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মামদানির জয়ে দেশটিতে ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য বেড়েছে।

দান্দিয়ার মতে, সাম্প্রতিক ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যগুলো থেকে বোঝা যায়, ‘ইসলাম বিদ্বেষ এখানে স্বাভাবিক বিষয়। সহনীয় ধর্মান্ধতার একটি রূপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘যতই পরিবর্তন হোক, বিষয়গুলো একই থেকে যায়।’

ইসলামবিদ্বেষী এই প্রচারণায় শুধু বেনামী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং অনলাইন মুসলিম-বিরোধী ব্যক্তিত্বই নন, রাজনীতিবিদরাও মামদানিকে তার ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করছেন।

কংগ্রেস সদস্য র‌্যান্ডি ফাইন কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করেছিলেন, মামদানি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক সিটিতে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করবেন।

সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন মামদানির বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ইসলাম কোনো ধর্ম নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ।’

নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ দূর করার জন্য ‘আরো অনেক কাজ করা বাকি।’

islam

ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ড জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে ‘বিশ্বব্যাপী জিহাদের ডাক’ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ এনেছিলেন।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর কোরি সেয়লর বলেন, ইসলাম বিদ্বেষ চক্রাকারে চলে।

মার্কিন গণমাধ্যম, পপ সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক আলোচনায় আরব এবং মুসলমানদেরকে নিয়ে নেতিবাচক চিত্রায়ন কয়েক দশক ধরে অব্যাহত রয়েছে।

২০০১ সালে আল-কায়েদার ৯/১১ হামলার পর এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়।

হামলার পর, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ মসজিদ, মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মুসলিম ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি করার জন্য গোপন তথ্যদাতাদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে।

অভিবাসনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইসলামীকরণ’-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের টার্গেটও ছিল মুসলমানরা।

এখন নিউইয়র্কের মুসলমানরা আবারো ইসলাম বিদ্বেষের ঝড়ের মুখে পড়েছেন। তবে এবার মুসলমানরা বলছেন যে, তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।

দান্দিয়া বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি এবং মিত্রদের কাছ থেকে আমরা যে সমর্থন পাব তাতে আমরা এখন আরো আত্মবিশ্বাসী।’

তিনি আরো বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এই ইসলামবিদ্বেষী প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করছি। কিন্তু আমি এটাকে এমনভাবে দেখাতে চাই না যে, আমরা কেবল ভুক্তভোগী। কারণ আমরা এখন লড়াই করতে সক্ষম।’

একই ধরনের কথা বলেছেন শাহানা হানিফ। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে, আমরা একটি শক্তিশালী জোট গড়ে তুলেছি, যার মধ্যে ইহুদি সম্প্রদায়, যার মধ্যে এশিয়ান, ল্যাটিনো, কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় রয়েছে। যাতে আমরা বলতে পারি যে, আমরা একে অপরের যত্ন নেব।’

মূল: আলি হার্ব, আল জাজিরা। অনুবাদ করেছেন রুবিনা আকতার

Share