ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতেই গাজায় আগ্রাসন চালিয়েছে ইসরাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

হামাস নির্মূলের লক্ষ্যে গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে স্থল অভিযান শুরু করে আইডিএফ। এ পর্যন্ত চলা আগ্রাসনে একের পর এক এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। হতাহতের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো ফিলিস্তিনি।

আর এসব কিছুর পেছনে রয়েছে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের চিরতরে উচ্ছেদ করা। মোট কথা, গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিতেই সেখানে আগ্রাসন চালানো হয়। গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের ‘অনিবার্য পরিণতি’ হবে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বহিষ্কার করা এমনটাই বলেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত রোববার ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলি বাহিনী আরো বেশি করে ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে। যাতে ফিরে যাওয়ার জন্য নিজের বাড়িঘর বলতে তাদের কিছুই অবশিষ্ট না থাকে। গাজাবাসী চরমভাবে বাধ্য হয় এই উপত্যকা ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে।

গত রোববার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের কথোপকথনের কিছু অংশ ইসরাইলের মারিভ পত্রিকার রিপোর্টে ফাঁস হয়েছে। সেখানে নেতানিয়াহু আরো বলেছেন, এ হামলার একমাত্র পরিণতি হলো গাজাবাসীকে অন্যত্র সরে যেতে হবে। তবে প্রধান সমস্যা হলো তাদের আশ্রয় দেবে এমন দেশ খুঁজে বের করা। এমন সিদ্ধান্ত কিছু লোককে হতাশ করবে। এখনই গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বসতি স্থাপন করা হবে না বলেও জানান নেতানিয়াহু।

সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া বৈঠকের আংশিক তথ্যে দেখা যায়, পার্লামেন্ট সদস্য লিমোর সন হার-মেলেক বলেছেন, গাজায় বসতি স্থাপনের জন্য আমেরিকা থেকে ইহুদি নিয়ে আসা যায়। তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।

নেতানিয়াহু আরো দাবি করেছেন, আমেরিকা গাজা ভূখণ্ডের প্রশাসন দখলের পরিকল্পনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু টাইমস অব ইসরাইল এ বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ট্রাম্পের গাজা দখল পরিকল্পনাটি আরব মিত্রদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে। ফলে এ নিয়ে খুব সামান্য উদ্যোগই নিয়েছেন ট্রাম্প।

বৈঠকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে আমেরিকা ও ইসরাইলের পরিকল্পনার কথাও উঠে আসে। সে সময় নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনিরা তখনই সহায়তা পাবেন যখন তারা নিজ অঞ্চলে ফিরে না যান।

চলমান এই অভিযান গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস করেছে ইসরাইল। প্রতি মুহূর্তে মানবিক পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি ঘটছে এখানে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৯ লাখ মানুষ।

চলতি বছরের মার্চের শুরু থেকে এই উপত্যকার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে আইডিএফ। ফলে খাদ্য, পানি, জ্বালানি, ওষুধ এবং সব মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়, যা অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

এদিকে, গাজার ‘দুর্ভিক্ষ’ ঠেকাতে সব পক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস। গত ১৪ মে দেশটির পার্লামেন্টে তিনি বলেন, গাজাবাসীকে রক্ষায় এটি সব পক্ষের ওপর একটি মানবিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ এড়ানো যায়।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত টানা হামলায় ৬২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি। এদের বেশিরভাগই নিহত হয়েছেন খান ইউনিস, বাইত লাহিয়া ও দাইর আল বালাহ এলাকায়।

হামাসের সঙ্গে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করার পর থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় কোনো সাহায্য প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরাইল।

এ মাসের শুরুতে নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে হামলার তীব্রতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়, যার ফলে ফিলিস্তিনিদের গাজার দক্ষিণে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

Share