লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন আর নেই

বিনোদন ডেস্ক:

বাংলাদেশের লালন সম্রাজ্ঞী খ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীন রাত ১০.১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউ বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তার মৃত্যুর খবরটি আমার দেশকে নিশ্চিত করেন চিকিৎসক আশীষ কুমার চক্রবর্তী।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই শিল্পী। বুধবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় এই শিল্পীকে।

৭১ বছর বয়সি ফরিদা পারভীনের অসুস্থতা বেশ কিছুদিনের। কিডনি সমস্যা ও ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় নিরন্তর ভুগছিলেন। কিডনি ডায়ালাইসিস চলতো সপ্তাহে দুদিন করে। তবে মাঝেমধ্যে অবস্থার অবনতি হয় তার। চলতি বছরে তিন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।

প্রথমবার ফেব্রুয়ারিতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ১৩ দিন হাসপাতালে থেকে বাসায় ফেরেন তিনি। এরপর ৫ জুলাই তাকে হাসাপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। টানা দুই সপ্তাহ তখন হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বেড়াজালেই দিন কাটছিল তার। এর মধ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হলে ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এই শিল্পীকে। এবারের অবস্থা যে আগের তুলনায় জটিল, তা সেদিনই জানিয়েছিলেন চিকিৎসক আশীষ কুমার চক্রবর্তী। এর মধ্যে ফরিদা পারভীনের উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তার বড় ছেলে ইমাম নিমেরী বলেছিলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তার মায়ের চিকিৎসার সব খরচ বহন করা ‘সম্ভব হচ্ছে না’।

নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সংগীত জীবন শুরু করলেও পরে তিনি ভিড়ে যান লালনের গানে। এরপর জীবনভর লালনগীতি চর্চাতেই ডুবে থেকেছেন এই শিল্পী। সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান তিনি। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।

ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে লালনের গানের যে চর্চা হয়ে এসেছে গেল পাঁচ দশক ধরে, সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে প্রায় ১৬ বছর আগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অচিন পাখি সংগীত একাডেমি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা, প্রতিষ্ঠানের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া এবং নিজস্ব ভবন না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটিও টিকে থাকার লড়াইয়ে।

Share