ঝুঁকিতে নগদ গ্রাহকদের অর্থ ও তথ্যের সুরক্ষা

অর্থনীতি ডেস্ক:

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর গ্রাহকের অর্থ ও তথ্যের সুরক্ষা ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির টিসিএস হিসাবের সিগনেটরি পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে। প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘নগদ’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে। সেই ব্যাখ্যায় সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে।

রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সংবাদিকদের লিখিত বক্তব্যে এ কথা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাখ্যায় নগদের লাইসেন্স ও অনুমোদন, বিভিন্ন সময়ের পরিস্থিতি ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ২০১৮ সালের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস রেগুলেশন-এর আইন অনুযায়ী শুধু ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে নতুন এমএফএস চালু করার বিধান রয়েছে। ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে এমএফএস তৈরির সুযোগ নেই। তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ডাক বিভাগ ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ‘নগদ’ নামে এমএফএস চালু করে।

পরবর্তীতে ‘নগদ’ এর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে লাইসেন্সের জন্য ডাক বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। নগদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য শুধুমাত্র ব্যাংকের সাথে ডাক বিভাগের নামে ব্যাংক হিসাব পরিচালনাসহ অন্যান্য শর্তে ‘নগদ’ পরিচালনার জন্য পরবর্তী ৬ মাসের জন্য ‘অন্তর্বতীকালীন অনুমোদন’ দেওয়া হয়। সময়ে সময়ে এ অনুমোদনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল অনুমোদনের মেয়াদ নবমবারের মতো বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরপরও ডাক বিভাগ ‘নগদ’ এমএফএসকে আইনি কাঠামোয় আনার পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, অন্তর্বতীকালীন অনুমোদনের পর কোনো ধরনের চুক্তি বা এজেন্সি সম্পর্ক ছাড়াই ডাক বিভাগ মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব থার্ড ওয়েভ টেকনোলিজ লিমিটেড (নগদ লিমিটেড) নামক তৃতীয় পক্ষের নিকট স্থানান্তর করেছে। এছাড়া ডাক বিভাগ নগদ এমএফএসের ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি পুরোপুরি নগদ লিমিটেডের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে নগদ এমএফএস পরিচালনার জন্য ডাক বিভাগের কোনো ধরনের ব্যবস্থাপনা কাঠামোর অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি।

প্রশাসক ও ম্যানেজমেন্ট বোর্ড নিয়োগ নিয়ে সংস্থাটি বলেছে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নগদ পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমএফএস মার্কেট, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা নিশ্চিত ও গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নগদে প্রশাসক নিয়োগ করে। একইসঙ্গে ডাক বিভাগের তিন সদস্যেকে প্রশাসক দলে যুক্ত করা হয়। নগদের হিসাব পরিচালনায় যৌথ সিগনেটরির মধ্যে ডাক বিভাগের একজন কর্মকর্তা ও নগদের একজন নিয়মিত কর্মকর্তার ওপর ক্ষমতা দেওয়া হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসকের ওপর ‘স্টে’ অর্ডার দেয়। ফলে প্রশাসক ও তার দল ‘নগদ’-এ কাজ করতে পারছেন না। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলার আসামি ‘নগদ লিমিটেড’-এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ মিশুক নিজেকে ‘নগদ লিমিটেড’-এর বৈধ ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করেছে। একইসঙ্গে ই-মেইলের মাধ্যমে একই মামলার অন্য একজন আসামি শাফায়েত আলম-কে ‘নগদ লিমিটেড’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। এক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

এছাড়া প্রশাসক দলের ই-মেইল আইডি, ই-মানি ইস্যু সংক্রান্ত কার্যাবলি তদারকির জন্য নেয়া ‘নগদ’ এর বিভিন্ন আইটি সিস্টেমের আইডি ও পাসওয়ার্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে গত ১২ মে হতে ‘নগদ’ এর কার্যক্রমে প্রশাসক দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আবার মামলার দুইজন আসামিকে ‘নগদ’ এর ই-মানি সংক্রান্ত ফিন্যান্স ও আইটি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এতে ‘নগদ’ এর গ্রাহকদের অর্থের ও তথ্যের সুরক্ষা বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। আবার বিভিন্ন ব্যাংকে ‘নগদ’ এর টিসিএস হিসাবসমূহের সিগনেটরি পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাছাড়া ফরেনসিক অডিট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োগ করা অডিট ফার্মকে সব ধরনের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংস্থাটি।

Share