দ্রব্যমূল্য নিয়ে স্বস্তিতে মানুষ কমেছে অধিকাংশ পণ্যের দাম

ডেস্ক রিপোর্ট:

আগের বছর কোরবানির ঈদ হয়েছে ১৭ জুন। ঈদের ঠিক আগের কয়েকদিনে খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়। এক বছর পর এসে ঠিক কোরবানি ঈদের আগমুহূর্তে গতকাল সোমবার বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কাঁচামরিচের দাম কমেছে ৮৫ শতাংশ। তবে শুধু কাঁচামরিচ নয়, বরং এমনিভাবে গত বছরের তুলনায় এবার আলু, পেঁয়াজ, মুরগির মাংস, ডিম, চিনি, শাকসবজি-তরিতরকারি ও মসলাসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে।

দ্রব্যমূল্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর ১৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া চিনি কেজিতে ৪০ টাকা কমে এবার ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার আলু কেজিতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কমে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, ৯০ টাকার পেঁয়াজ কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়, ১৯০ থেকে ২০০ টাকার ব্রয়লার মুরগি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে ১৫০ টাকা এবং ১৬০ টাকা মুরগির ডিম (লাল) ডজনে ৪০ টাকা ১২০ টাকা আর ১৫০ টাকার সাদা ডিম ৪০ টাকা কমে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাঝখানে মিনিকেট চালের দাম কিছুটা বাড়লেও নতুন চাল বাজারে আসার পর কেজিতে ২০ টাকা কমে বর্তমানে আগের বছরের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শাকসবজি-তরিতরকারিসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। এতে দ্রব্যমূল্যের সরবরাহ ও দামের বিষয়ে ভোক্তাদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের ইমাম উদ্দিন বাবলু বলেন, গত বছরের তুলনায় সব ধরনের ডালের দাম কমেছে। এ ছাড়া আটা, চিনি ও মসলার দামও কমেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার না থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর অবস্থানে কারণে এবার বড় বড় কোম্পানির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করতে পারছেন না। ফলে সব ধরনের পণ্যে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।

আগের বছরের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকার বদলে ২৮০ থেকে ২৯০ এবং সোনালি কক ২৮০ টাকার বদলে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকার গরুর মাংস ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা। তবে খাসি, ছাগল দেশি মুরগি ও হাঁসের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়, দেশি মুরগি ৫৫০ এবং হাঁস ৭০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।

000

গত বছরের তুলনায় অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম কমলেও সরু জাতের চাল ও মোটা চালের দামে তেমন হেরফের হয়নি। তবে আটার দাম কমেছে। গত বছর প্যাকেটজাত আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং খোলা আটা ৫০ টাকা কেজি ছিল। গত বছরের তুলনায় ১০ টাকা কমে গতকাল সোমবার খোলা আটা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে এবং প্যাকেটজাত আটা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

তবে গত বছরের তুলনায় ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দেওয়া গত বছরের ১৩ জুনের বাজার দরের তালিকায় দেখা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৪১ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনে দাম ছিল ১৬৪ টাকা। বর্তমানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল ১৬৯ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার কাঁচা সবজি ও তরিতরকারির দাম ক্রেতার নাগালেই রয়েছে। বরং গত বছরের তুলনায় দাম অনেক কম। গত বছর যেখানে ২০০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হতো, এবার তা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাঁজর ৫০ টাকার স্থলে এবার ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ১০০ টাকার বদলে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ১০০ টাকার টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এর আগে ৫৪ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ছিল। এর সুফলও ভোগ করেছেন দেশের সাধারণ মানুষ। ওই সময় সরকার বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এমনটি সম্ভব হয়েছিল মনে করেন ভোক্তা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনগুলোতে বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

এর মধ্যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গড়ে ওঠা বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, সুনির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির কাছে যাতে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি না থাকে, সেজন্য নতুন ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া, বাজার মনিটরিং, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় এবং ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সরকার সিন্ডিকেটকে সাপোর্ট করে না। সার্বিক বাজার ব্যবস্থা দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হয়ে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মাহে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা সফল হয়েছে। তাই রমজান মাসের মতো কর কিংবা শুল্ক রেয়াত ছাড়া সম্ভাব্য সব এবং নতুন পদক্ষেপ আবারও নেওয়া হচ্ছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়।

Share