ডেস্ক রিপোর্ট:
খুলনার ফুলতলা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে সার্চ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে আওয়ামী লীগের টিকিটধারী নেতা, নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার সক্রিয়কর্মী, অন্য উপজেলার বাসিন্দা স্থান পেয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, বিএনপির সার্চ কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা। ১৭ বছর এলাকা ছেড়ে নিরাপদে চাকরি করেছেন তারা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও বাদ পড়েছেন রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকা জেলখাটা নেতা। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সার্চ কমিটি বাতিলের জন্য মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ফুলতলা উপজেলার দামোদর, জামিরা ও ফুলতলা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে সার্চ কমিটি ঘোষণা হয়। খুলনা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মনিরুল হক বাবুল ও সদস্য এস এ রহমান বাবুল অনুমোদনে স্বাক্ষর করেন। কমিটি প্রকাশের পর আসতে থাকে নানা অভিযোগ। দামোদর ইউনিয়ন কমিটির ১৫ নং সদস্য কায়েস সরদার আওয়ামী লীগের টিকিটধারী সদস্য ছিলেন। ফুলতলা ইউনিয়নের ১৪ নং সদস্য মোল্লা নাসিদুল ইসলাম পরাগের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা ড. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে নৌকা মার্কার প্রচারণা ও জনসংযোগের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। জামিরা ইউনিয়ন সার্চ কমিটির ১৫ নং সদস্য শরিফুল ইসলামের বাড়ি পাশের ডুমুরিয়া উপজেলার টোলনা গ্রামে। তিনি ফুলতলারই বাসিন্দা নন।
সার্চ কমিটি গঠনের আগে খুলনা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মিটিংয়ে বলা হয়েছিল, কোন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতা সার্চ কমিটিতে থাকবে না। থাকতে হলে তাকে পদত্যাগ করে আসতে হবে। সার্চ কমিটিতে বিগত ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকা কর্মীকে মূল্যায়ন করা হবে। অথচ তিন কমিটিতেই বিএনপির জেলখাটা ত্যাগী অনেক নেতার নাম না থাকলেও রয়েছে অঙ্গ দলের প্রচুর নেতা। দামোদর ইউনিয়ন সার্চ কমিটির ১ নং সদস্য বিএনপি নেতা জামাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান জুয়েল হয়েছেন ১৬ নম্বর সদস্য। একই কমিটির আফতাবউদ্দিন খান বিদ্যুৎ স্বেচ্ছাসেবক দলের এবং নাজমুল দপ্তরি ও মেহেদী হাসান শিপলু যুবদল নেতা। জামিরা ইউনিয়নের গাজী ফজলুর রহমান, আব্দুস সবুর বিশ্বাস, আফসার শেখ, আরজব আলী ফকির, মাসুদুর রহমান সরদার, আব্দুল আজিজ, মো: জিয়াউল ইসলাম রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাদেরকে রাজপথে পাওয়া যায়নি। এদের অনেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন প্রকাশ্যে। ফুলতলার শেখ গোলাম মোস্তফা নিরাপদে চাকরি করেছেন।
অথচ দামোদর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব সরদার মোতাহার হোসেন কিরণ, আবুল হোসেন, বেল্লাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম মিকু, ফুলতলার মমিন সরদার, শেখ মঈনুদ্দিন শুভ, মহিরউদ্দিন মহির প্রমুখ পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত সার্চ কমিটি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খোদ ফুলতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার। আমার দেশকে তিনি বলেন, জেলা বিএনপি নেতারা বলেছিলেন রাজপথের ত্যাগী ও আওয়ামী সম্পৃক্ততা নেই এমন নেতাদের নামের তালিকা দিতে। অঙ্গ দলের কারো নাম না দিতেও বলেছিলেন তারা। অথচ কমিটি ঘোষণার পর দেখা গেলো ১৭ বছরে একদিনও মিছিল করেনি, এলাকায় ছিল না, বাইরে চাকরি করেছে, আওয়ামী লীগের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক রেখে চলেছে, তাদেরকে সদস্য করা হয়েছে। অথচ মামলার আসামি, জেলখাটা নেতাদের নাম নেই। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ফুলতলায় দলকে ধরে রেখেছিলাম। আমাদের পরামর্শ মূল্যায়ন করা উচিত ছিল।
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একশ’র অধিক দুইশ’র অনধিক কর্মী খুঁজে বের করে তালিকা করা হবে। যারা পরবর্তীতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা নির্বাচন করবেন। মূলত এই কাজের তদারকির জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের হাতে অন্য কোন ক্ষমতা নেই। ওয়ার্ড কমিটি গঠন হয়ে গেলেই সার্চ কমিটি বিলুপ্ত হবে। মূল যাচাই বাছাই ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে জেলা বিএনপি। এটা না বুঝেই কিছু কর্মী নানা রকমভাবে বিরোধিতা করছে। তাদেরকে বলেছিলাম, তালিকায় কারো ব্যাপারে আপত্তি থাকলে পার্টি অফিসে এসে নিয়মিতান্ত্রিকভাবে আপত্তি জানাতে। কিন্তু তারা নিয়মে না এসে মিছিল মিটিং করছে, বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। যা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। অঙ্গ দলের যাদের নাম সার্চ কমিটিতে আছে তারা সবাই পদত্যাগ পত্র দিয়েছে।