খুলনার ওএমএস মার্কেট এখনো আওয়ামী দোসরদের নিয়ন্ত্রণে

ডেস্ক রিপোর্ট:

খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এখনো ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত হয়নি। অতি লাভজনক কারবার হিসেবে পরিচিত ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী ঠিকাদাররা। আগের মতোই প্রতি পয়েন্টে বরাদ্দ চাল ও আটার সামান্য অংশ বিক্রি করে বাকি অংশ চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। অব্যবস্থাপনা, ঘুস, দুর্নীতি আর খাদ্যপণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) ইকবাল বাহার চৌধুরী এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) কাজী সাইফুদ্দীনকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। ইকবাল বাহার চৌধুরীকে খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকার অতিরিক্ত পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এবং কাজী সাইফুদ্দীনকে বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ১৭ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রণালয়ের (সংস্থা প্রশাসন-১) শাখার উপসচিব জয়নাল মোল্লা স্বাক্ষরিত পত্রে বদলি আদেশ দেওয়া হয়।

একাধিক সূত্রের অভিযোগ, বদলির আদেশ হাতে পেয়ে যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইকবাল বাহার চৌধুরী। ব্যাক ডেটে ফাইলে স্বাক্ষর করে অন্তত পাঁচজনকে বিভিন্ন খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করেছেন। নতুন করে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তারা হলেন- সাতক্ষীরার নকিপুর খাদ্যগুদামে মোল্লা আহমেদ জামান, যশোরের কেশবপুরে বানেছুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মাসুদ রানা, যশোরের খাজুরায় মিঠুন চক্রবর্তী ও বাগেরহাটের মোল্লাহাটের গরফা বাজার খাদ্যগুদামে মো. ইব্রাহিম হোসেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে খাদ্য ভবন এলাকায়।

সূত্রটির দাবি, ১৯ আগস্ট তিনি এসব ফাইলে স্বাক্ষর করলেও তারিখ দিয়েছেন বদলির আদেশ আসার আগের। জানা গেছে, ইকবাল বাহার চৌধুর বিষয়ে গত ১১ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওএমএস ডিলার মেসার্স এসকে ট্রেডিংয়ের প্রোপাইটর ইমন শেখ। তিনি অভিযোগ করেন, তার ডিলারশিপ চালু রাখার বিনিময়ে তিন লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। তিনি ইকবাল বাহারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন বিবরণ তুলে ধরে ও সম্পদের অবস্থান জানিয়ে দুদকের তদন্ত দাবি করেন।

এর আগে গত জুনে খাদ্য উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) খুলনা জেলার সদস্য মো. রিদোয়ান শেখ তামিমি। তারও আগে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর খাদ্য পরিদর্শক সেলিম রেজার লিখিত অভিযোগে বেরিয়ে আসে খুলনা খাদ্য বিভাগের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

সাবেক ওএমএস ডিলার মো. খালিদ হোসেন জানান, আরসি ফুডের বদলির আদেশ আসার পরে ব্যাক ডেটে সাতক্ষীরার খাদ্য পরিদর্শক আমিনুল ইসলামকে ডুমুরিয়া খাদ্যগুদামের ইনচার্জ হিসেবে বদলি করেছেন। এছাড়া ওএমএস পয়েন্টে বরাদ্দ চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রি করে পুরো টাকাটাই আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা।

গরফা বাজার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়নপ্রাপ্ত মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ১৯ তারিখে আমার বদলির আদেশে সই হয়েছে বলে জেনেছি। তবে আমি এখনো খুলনায় আছি। ছাড়পত্র নিয়ে শিগগিরই নতুন কর্মস্থলে যাব।

এ বিষয়ে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, যিনি নতুন নিয়োগ পেয়েছেন তিনি না আসা পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালন করব। বদলি বা পদায়ন একটা রুটিন ওয়ার্ক। এক স্টেশনে তিন বছর চাকরি করলে তাকে বদলি করতে হবে। তবে ১৭ তারিখের পরে তিনি কাউকে বদলি বা পদায়ন করেননি। পুরোনো ডিলারদের অনেক অন্যায় আবদার ছিল। তিনি তা পূরণ করেননি বলে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ। ওএমএস ডিলার নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের স্টে অর্ডার আছে। সেপ্টেম্বরে যার মেয়াদ শেষ হবে। স্টের মেয়াদ না বাড়লে নতুন ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানালেন তিনি।

Share