ডেস্ক রিপোর্ট:
বাগেরহাটের হযরত ফাতেমা (রা.) মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ফারজানা ফেরদৌসিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষের এসব দুর্নীতির কারনে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। মানা হচ্ছে না কোন ধরনের শৃঙ্খলা। শিক্ষকেদের বেতন ভাতা নিয়েও দেখা দিয়েছে বৈষম্য। শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।
জানাগেছে ২০০৫ সালে বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকায় বিএনপি নেতা মো. শাহজাহান মিনার বাড়ি ভাড়া নিয়ে হযরত ফাতেমা (রা.) মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের যাত্রা শুরু হয়। তখন মুফতি মাওলানা মো. দিদারুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৯৩ জন শিক্ষার্থী, অধ্যক্ষসহ ছয়জন শিক্ষক, একজন প্রদর্শক এবং চারজন কর্মচারী রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শহিদুল্লাহ, অশোক কুমার বাড়ৈ এবং শেখ আব্দুল হাকিম অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতেও শেখ আব্দুল হাকিমের নাম অধ্যক্ষ হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মীর শওকত আলী বাদশার নাম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে কাগজপত্রে ফারজানা ফেরদৌসির নাম দেখানো হয়। বলা হয়, ২০০৫ সালের ২ ডিসেম্বর নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই দিন বাংলা প্রভাষক হিসেবে নিবেদিতা ঘরামি ও কম্পিউটার প্রভাষক হিসেবে রিয়াজ হোসেন হাওলাদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রেজুলেশনে মো. শাহজাহান মিনাকে সভাপতি হিসেবে দেখানো হলেও তিনি দাবি করেন, ওই নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন না তিনি এবং কোনো কাগজে স্বাক্ষরও করেননি। নিয়োগসংক্রান্ত নথিতেও বিভিন্ন অসংগতি রয়েছে বলেও অভিযেোগে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির প্রভাষক শরীফ মোহাম্মদ মাশেকুন্নবী এবং রেশমা আখতার অভিযোগ করে জানান, তারা উচ্চতর স্কেলের জন্য যোগ্য হলেও অধ্যক্ষ তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিচ্ছেন না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
প্রভাষক মাশেকুন্নবী বলেন, ২০১২ সালে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি। আট বছর পর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/উচ্চতর স্কেলের আবেদন করার সুযোগ থাকলেও অধ্যক্ষ আমার আবেদন আটকে রেখেছেন।
প্রভাষক রেশমা আখতার বলেন, ৫০ শতাংশ শিক্ষকের উচ্চতর স্কেল পাওয়ার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ তার ঘনিষ্ঠ নিবেদিতা ঘরামি এবং রিয়াজ হাওলাদারকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে আমাদের কাগজপত্র ছাড় করেননি।
অধ্যক্ষ ফারজানা ফেরদৌসির বিরুদ্ধে ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারি প্রকল্প ও অনুদানের অর্থ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে।
কলেজের দুজন প্রভাষক, সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান মিনা, পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মো. মারুফুজ্জামান রনি এবং মতিয়ার রহমান মিনা এসব অনিয়মের শাস্তি এবং শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ফারজানা ফেরদৌসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’