বিশেষ রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন এক দফায় রূপ নেয়; তখন শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই বিশ্ব রোডে ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দেন ইমন হাসান। একপর্যায়ে মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হন ইমন। তাকে দ্রুত মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাধা দেয় পুলিশ। অনেক অনুরোধ ও চেষ্টার পর অবশেষে পুলিশ যেতে দেয় এবং সেদিন রাতেই ইমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হতদরিদ্র পরিবারটি অর্থের অভাবে ইমনের চিকিৎসা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেনি। ১২ দিন পর ১৮ আগস্ট ভোর ৫টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ইমন।
টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ইমন হাসান। তিনি নলিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভূঞাপুরের অলোয়া মনিরুজ্জামান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে গোপালপুরের হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের সহায়তায় তিনি টাঙ্গাইল শহরে এক চাচার বাসায় থাকতেন। সেখানে থেকে বিভিন্ন বাসায় টিউশনি করতেন।
ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইমন।
তাকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল পরিবার। মা রিনা খাতুন আমার দেশকে বলেন, ‘ইমন ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে আমরা এখন দিশাহারা।’
নানা কিতাব আলী শেখ জানান, ইমনের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। এরপর তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে ইমনসহ তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করেন। পরে যমুনা নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে ইমনের নানাবাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নলিন গ্রামে আশ্রয় নেয় পরিবারটি।
১৮ আগস্ট রাত ৯টায় গোপালপুরের নলিন নঈমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইমনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার ছোট ভাই হাফেজ মো. সুমন জানাজা পড়ান। জানাজার পর ইমনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং ওই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু শহীদ ইমন হাসানের পরিবারকে একটি অটোরিকশা দিয়েছেন। তবে এখনো পরিবারটি আর্থিক কষ্টে ভুগছে।
পরিবারের দৈন্যদশা তুলে ধরে রিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা যেন একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পাই এবং আমার অন্য সন্তানদের জন্য যেন সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়Ñ এটাই আমার দাবি।’