প্যারিস, ১৭ মার্চ ২০২৫
ফ্রান্সে অভিবাসনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। বিশেষ করে অনিয়মিত অভিবাসীদের বৈধতার সুযোগ নিয়ে দেশটির সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তীব্র আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফরাসি সরকার অভিবাসন আইন আরও কঠোর করার উদ্যোগ নিলেও কিছু নির্দিষ্ট খাতে শ্রমিক সংকটের কারণে কাজের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে।ফ্রান্স সরকার সম্প্রতি নতুন অভিবাসন আইন প্রণয়ন করেছে, যার মূল লক্ষ্য অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত তাদের দেশে ফেরত পাঠানো। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ফ্রান্সে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের মধ্যে মাত্র ৮% বৈধতা পেয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় কম। ফরাসী অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, নতুন নীতির ফলে বৈধতার প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
সম্পতি ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোটাইয়ো নতুন একটি সার্কুলার ইস্যু করেছেন, যা অভিবাসন নীতিকে আরও কঠিন করেছে। এর ফলে ২০১২ সালে চালু হওয়া “সার্কুলার ভালস” বাতিল হয়েছে, যা অনিয়মিত অভিবাসীদের নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বৈধতা পাওয়ার সুযোগ দিত। কিন্তু নতুন ওই সার্কুলারে ফরাসি ভাষার দক্ষতা এবং আইন মেনে চলা এবং ফ্রান্সে দীর্ঘদিন বসবাসের শর্ত আরোপ করেছে। নিয়মিতকরণ কোনো স্বয়ংক্রিয় অধিকার নয়, বরং এটি প্রেফেকচুরগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন ভাষ্যমতে “আমাদের লক্ষ্য হলো অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা এবং শুধুমাত্র যোগ্য শ্রমিকদেরই ফ্রান্সে কাজের সুযোগ দেওয়া।”
তবে মানবাধিকার সংস্থা La Cimade-এর মতে, এই নীতির ফলে অনেক অভিবাসী অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন, “অনিয়মিত অভিবাসীদের কাজের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ কমিয়ে দিলে তারা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়বে।
কিন্তু অপরপক্ষে ফ্রান্সে অভিবাসন নীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন এবং শ্রমবাজারের চাহিদার কারণে বাংলাদেশিসহ অনেক অভিবাসীর জন্য বৈধতার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে “métier en tension”((কর্মী সংকট খাত)তালিকায় রেস্টুরেন্ট খাতকে যুক্ত করার ফলে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
ফ্রান্সে কিছু নির্দিষ্ট খাতে শ্রমিক সংকট রয়েছে, যা সরকার স্বীকৃতি দিয়ে “métier en tension” তালিকা তৈরি করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এই তালিকায় রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খাতকে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, এই খাতে কাজ করা অনিয়মিত অভিবাসীরা এখন এর আওতায় বৈধতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত মানতে হবে: ফ্রান্সে কমপক্ষে ৩ বছর বসবাস থাকতে হবে। গত ২৪ মাসের মধ্যে অন্তত ১২মাস কাজের প্রমাণ থাকতে হবে। ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট দিতে হবে। কর পরিশোধ ও ফ্রান্সে প্রচলিত আইন কানুন মেনে চলতে হবে।
নতুন অভিবাসন নীতির ফলে ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে কিন্তু metier en tensions এ নতুনতবে রেস্টুরেন্ট সেক্টর যুক্ত করার পর বাংলাদশিদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। একজন বাংলাদেশি অভিবাসী, যিনি রেস্টুরেন্ট খাতে কাজ করেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমি ফ্রান্সে পাঁচ বছর ধরে আছি। সবসময় কাজ করেছি, কিন্তু বৈধ কাগজ নেই। ফ্রান্সের নতুন অভিবাসন নীতির ফলে বৈধ হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়েগেছিল কিন্তু “Métier en tension” রেস্টুরেন্ট সেক্টর যুক্ত হওয়ায় আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।
ফ্রান্সের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের নতুন নীতির বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, অনিয়মিত অভিবাসীরা ফরাসি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের বৈধতা দেওয়া উচিত।
অভিবাসন বিশ্লেষক জঁ-মিশেল দ্যপোঁ বলেন, “ফ্রান্সের কৃষি ও নির্মাণ খাতে অভিবাসীদের ওপর নির্ভরতা অনেক বেশি। অথচ তাদের বৈধতার সুযোগ সীমিত করে দিলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা কাজের মাধ্যমে বৈধ হতে চান, তাদের উচিত ফরাসি ভাষা শেখা, নথিপত্র প্রস্তুত রাখা এবং আইনি সহায়তা নেওয়া।ফ্রান্সে কাজের মাধ্যমে বৈধতা পাওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে, তবে শর্তগুলো কঠোর হচ্ছে। অভিবাসন আইন পরিবর্তনের ফলে অনেক অভিবাসী বৈধতা পাওয়ার আশা হারাচ্ছে, কিন্তু শ্রমবাজারের চাহিদার কারণে কিছু নির্দিষ্ট পেশায় এখনও সুযোগ রয়েছে।সুতরাং, ফ্রান্সে কাজের মাধ্যমে বৈধ হতে হলে নিয়ম মেনে চলা, সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা এবং নির্দিষ্ট খাতে কাজের সুযোগ খোঁজা গুরুত্বপূর্ণ।
জামিল আহমেদ সায়েমএসিস্টেন্ট জুরিডিক