বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় আদর্শ ঠিকানা হতে পারে ফ্রান্স

বিশেষ প্রতিবেদক:

ফ্রান্স বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গন্তব্য। আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, তুলনামূলক কম টিউশন ফি এবং ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

বর্তমানে ফ্রান্সে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রাঁদ একোলে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান বজায় রাখা হচ্ছে। প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিতভাবে কিউএস বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থান দখল করছে। আধুনিক গবেষণা অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক একাডেমিক সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের কারণে ফ্রান্স উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃত, যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্যও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

একসময় ভাষাগত সীমাবদ্ধতা ফ্রান্সে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলেও বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। দেশটিতে এখন প্রায় এক হাজার ৭০০ এর বেশি ইংরেজি-মাধ্যমের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। একোল পলিটেকনিক, সায়েন্স পো প্যারিস, সর্বোন বিশ্ববিদ্যালয় এবং উনি-লা-সালের মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান ও কৃষি গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রে আধুনিক ও চাহিদাসম্পন্ন কোর্স পরিচালনা করছে যা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করছে।

ফ্রান্সের শিক্ষাব্যবস্থা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্যও মানবিক ও সহানুভূতিশীল। দেশের ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু থাকা ‘ডিইউ প্যাসারাল’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী এক বছরের বিনা মূল্যের ফরাসি ভাষা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পুনরায় উচ্চশিক্ষায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এই কর্মসূচি ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে যা তাদের একাডেমিক পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

খরচের দিক থেকেও ফ্রান্স ইউরোপের অন্যান্য জনপ্রিয় শিক্ষা গন্তব্যের তুলনায় সাশ্রয়ী। নন-ইইউ শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর পর্যায়ে বার্ষিক টিউশন ফি প্রায় দুই হাজার ৮৫০ ইউরো এবং মাস্টার্স পর্যায়ে প্রায় ৩৮০০ ইউরো। এছাড়া ফরাসি সরকারের আইফেল এক্সেলেন্স স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বৃত্তি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে।

তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্যারিসের সর্বোন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ইন বায়োইনফরমেটিকস অ্যান্ড মডেলিং-এর শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জানান, ফ্রান্সে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা ভাষাগত সমস্যা, কারণ দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজ ও পার্ট-টাইম চাকরির ক্ষেত্রে ফরাসি ভাষা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। নতুন সংস্কৃতি, ভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ও একাডেমিক মানের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক শিক্ষার্থীর সময় লাগে। তবে তিনি মনে করেন, ফরাসি ভাষা শেখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তামূলক সেবা ব্যবহার করা এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

ফ্রান্সে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং ভিসা জটিলতা কাটাতে কূটনৈতিক পর্যায়েও উদ্যোগ জোরদার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে ফরাসি কর্তৃপক্ষ ও ঢাকাস্থ আলিয়ঁস ফ্রঁসেজসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। ফরাসি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার এই যোগাযোগ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।

বিশ্বমানের শিক্ষা, তুলনামূলক সাশ্রয়ী ব্যয় এবং বহুজাতিক শিক্ষার পরিবেশ সব মিলিয়ে ফ্রান্স ক্রমেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার আদর্শ ঠিকানা হয়ে উঠছে।

Share