শিবির করায় চাপাতির কোপে বিচ্ছিন্ন করা হয় রাসেলের পা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্র শিবিরের নেতা মো. রাসেল আলমকে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের ক্যাডাররা গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ২০১৪ সালের ১৬ জুন ক্যাম্পাসে ঘটনাটি ঘটে। শিবিরের কয়েকজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছে জানতে পেরে রাবির শহিদুল্লাহ কলা ভবন ঘেরাও করে ২৫ থেকে ৩০ জনের ছাত্রলীগের তৎকালীন ক্যাডার। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিবিরের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে ।

রাবির নবাব আব্দুল লতিফ হলের শিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারি মো. রাসেল ‘আমার দেশ’কে সেদিন ঘটে যাওয়া ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনায় দেন। তিনি জানান, বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ সেদিন শহিদুল্লাহ কলা ভবনের গেট বন্ধ করে দেয়। আমি তখন ভেতরে আটকা পড়ি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে হাসিব ভাই ও মঞ্জুর ভাইকে গ্রেপ্তার করে।

রাসেল আরো বলেন, সেদিন বেলা তিনটার দিকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী আমাকে ঘিরে ফেলে এবং একটা রুমের ভেতরে নিয়ে যায়। তাদের হাতে বন্দুক, চাপাতি, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ছিল। তারা একঘণ্টা ধরে আমাকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিন সেখানে ছিল। এ সময় রিনেট নামের ছাত্রলীগ কর্মী আমাকে পিঠে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। কিছু বুঝার আগেই অন্য কেউ আরেকটা চাপাতি দিয়ে হাতে কোপ দেয়। হাত কব্জি থেকে কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলতে থাকে।

দুই পায়ে গুলির সেই নির্মম ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসেল বলেন, ছাত্রলীগ নেতা ও পরবর্তী সময়ে দলটির বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু আমার দুই পায়ে গুলি করে। আমি মাটিতে পড়লে ছাত্রলীগ নেতা ও পরবর্তী সময়ে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ফিরে এসে চাপাতি দিয়ে আমার পায়ে কোপাতে থাকে। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ওরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়াতে গিয়ে দেখি আমার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। ছাত্রলীগের নৃশংসতায় একেবারে পঙ্গু হয়ে গেলাম।

তিনি আরো জানান, কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে। তখনকার মতিহার থানার ওসি আলমগীর আমাকে পুলিশ ভ্যানে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. বি কে দাম আমার অপারেশন করতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রায় একঘণ্টা যন্ত্রণায় চিৎকার চেঁচামেচির পর আমার অপারেশন শুরু করে। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা অপারেশন শেষে আমাকে আইসিইউতে শিফট করে। তারপর আইসিইউতে আমাকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখনকার সময় কোর্টে মামলা করা হয়েছিল কিন্তু পরে সেটা খারিজ করে দেওয়া হয়। আমি বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তিনি বলেছেন মামলা করবেন নতুন করে। কিন্তু এখনও মামলা করা হয়নি।

Share