ডেস্ক রিপোর্ট:
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিগত আওয়ামী লীগের সময় উচ্চ আদালতে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন-প্রতীক অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রায় রোববার ১ জুন। নিবন্ধন-প্রতীক বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবিদের কয়েক দফা আপিল শুনানির পর গত ১৪ মে সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে রায়ের জন্য ১ জুন দিনটি ধার্য করেন।
আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট কথিত রাজনৈতিক দল তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ কয়েকজন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন। সেই সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেছিলেন জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত। তবে একই সঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দেয়া হয়। তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতে ইসলামির করা আবেদন একই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন কুখ্যাত চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
শেষ মরণকামড় হিসেবে আওয়ামী লীগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাস্ট্রমন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছিল। যদিও হাসিনা পালিয়ে যাবার পর অন্তবর্তী সরকার ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
হাসিনার পলায়নের গতবছর ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে পূর্বের খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ। এর ফলে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলে যায়। চলতি বছরের ১২ মার্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানি শুরু হয়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হালিম এ প্রসংগে বলেন, ‘১৯৭৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত জামায়াতের ৫৫ জন নেতা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের মধ্যে ৫০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।’ তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন দ্রুত ফিরে না পাওয়া আমাদের জন্য দুঃখজনক। আশা করি সাংবিধানিক ও আইনানুগ পন্থায় আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
নিবন্ধন মামলাটির সুরাহা নিয়ে হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলটি ছিল শেখ হাসিনার দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা এবং রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার অপকৌশল। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে যত জানু করে রাখার একটি কৌশল ছিল এটি। জামায়াতে ইসলামী সবগুলো বিষয় পূরণ করার পরও নিবন্ধন পেল না অথচ আমরা কি দেখলাম বিগত ২০২৪ এর নির্বাচনের পূর্বে নামসর্বস্ব দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়া হলো। এসব দলের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৫০ জনকে মিছিল করার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ নিবন্ধনের শর্ত ছিল কমপক্ষে ১শটি উপজেলা এবং ২১ টি জেলায় কমিটি থাকা লাগবে। তখন ১০/১২ টি দলের একটি শর্ট ছিল করা হয়েছিল, এর মাঝে তালিকার প্রথমে থাকা ২/৩ টি দলকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ পিছনের সারির দলকে নিবন্ধন দেয় অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
মামলায় আদালতে জামায়াতের পক্ষে এ মামলায় শুনানি করছেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ প্রমুখ ।