ডেস্ক রিপোর্ট:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় এক দশক ধরে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভাগনি। জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম পরিবর্তন করে ভাগনি থেকে বনে গেছেন মেয়ে। জাল-জালিয়াতি করে এখন পর্যন্ত নিয়েছেন প্রায় ১৭ লাখ টাকা। উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের বিজয় পাড়ুয়া গ্রামের ফজরুন নেছার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ আলী যুদ্ধের ছয় বছর পর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। কিন্তু তার বোন আছতুরা বেগমের মেয়ে ফজরুন নেছা মামাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। তবে বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন ফজরুনের মা আছতুরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে ফজরুন নেছার বাবার নাম ছিল মো. তোতা মিয়া আর মায়ের নাম ছিল আছতুরা বেগম। ডিসেম্বরের ১ তারিখ এনআইডি কার্ডে বাবার নাম পরিবর্তন করে আলমাছ আলী লেখান। তবে মায়ের নাম আছতুরাই রেখে দেন। এনআইডি পরিবর্তন করে বীর মুক্তিযোদ্ধার আপন বোনকে স্ত্রী আর নিজে হয়ে যান ভাগনি থেকে মেয়ে। এই জালিয়াতির পথ বের করেন ফজরুন নেছার স্বামী চান মিয়া (কালা)। বিষয়টি নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালে তাদের ভাতা বন্ধ করা হয়। কিন্তু তখনকার তদন্তকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা জনি রঞ্জন দের ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্মানী ভাতা আবার চালু করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তখন ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষী দেন ফজরুন নেছা আলমাছ আলীর মেয়ে। কিন্তু এই ছয়জনের চারজন বর্তমান তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জানিয়েছেন তখনকার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার লেখা কাগজে তারা স্বাক্ষর দিয়েছেন। তাতে কী লেখা ছিল তা তাদের পড়ে শোনানো হয়নি।
এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক জানান, আলমাছ আলীর কোনো সন্তান ছিল না। ফজরুন তার বোনের মেয়ে। তার বাবা তোতা মিয়া। ফজরুন নেছার স্বামী চান মিয়া জালিয়াতি করে ভাগনি থেকে মেয়ে বানিয়েছে তাকে। আমাকে সাক্ষীর জন্য নিয়েছিল কিন্তু আমি দিইনি। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন। তাতে কী লেখা ছিল পড়ে শোনানো হয়নি।
এদিকে ২০১৪ সাল থেকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নিকাহনামা ও মায়ের জাল মৃত্যুসনদ ব্যবহার করে ভাতা নিচ্ছেন ফজরুন। ২০২০ সালে আলমাছ আলীর ভাতিজা নাসির উদ্দীনের অভিযোগের ভিত্তিতে ফজরুনের ভাতা বন্ধ করা হয়। তখন এনআইডি কার্ডে বাবার নাম ছিল মো. তোতা মিয়া। ২০২০ সালে এনআইডি কার্ডে বাবার নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন তিনি। কিন্তু বিভাগীয় অফিস সেটা বাতিল করে দেয়। এরপর ২০২১ সালে আবারও বাবার নাম পরিবর্তনের আবেদন করলে সিলেট জেলা অফিস সেটি গ্রহণ করে পরিবর্তন করে দেয়।
এদিকে ফজরুন নেছা তার মাকে মৃত দাবি করলেও এলাকায় গিয়ে তার মা, বড় বোন ও ২ ভাইকে খুঁজে পাওয়া যায়। এর আগে মা আসতুরা বেগম বিষয়টি জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ফজরুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। ভাই মকবুল ও মখলিছ জানান ফজরুন নেছা আমাদের বোন। আর মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ আলী আমাদের মামা। ফজরুনের স্বামী জালিয়াতি করে আমার মামাকে বোনের বাবা সাজিয়েছে।
এ বিষয়ে ফজরুন নেছা বলেন, ‘আমি বড় হয়েছি তোতা মিয়ার ঘরে। আমি জানতাম না যে আমার বাবা আলমাছ আলী। একদিন আমার চাচা খুরশিদ আলম আমাকে বলেন, তোমার বাবা আলমাছ আলী। আর তোতা মিয়া তোমার পালিত বাবা। তাই এনআইডি কার্ডেও বাবার নাম তোতা মিয়া দেওয়া ছিল। পরে সেটা পরিবর্তন করে আলমাছ আলী করা হয়েছে।’
তবে মা আসতুরা বেগম বলেন, ‘আমি এই মেয়েকে জন্ম দিয়েছি। কিন্তু টাকার জন্য মেয়ে আমাকে অস্বীকার করে। আমার ভাই আলমাছ আলীর কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। জালিয়াতি করে ফজরুন নেছা আমার ভাইয়ের মেয়ে সেজেছে।’