ডেস্ক রিপোর্ট:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুন্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় হলফনামায় দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ও তার আয়কর বিবরণী সম্পদের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, এখানে দুটি বিষয়। একটি অংশ নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে গেছে, নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়ে। আরেকটা অংশ হচ্ছে হলফনামায় দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ও তার আয়কর বিবরণী সম্পদের হিসাব করে আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুসারে দুদক পৃথকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সেটা খানিকটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। বিষয়টি জানানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে ইসিকে দুদক চিঠি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটিও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় সম্পদের ঘোষণায় অসত্য তথ্য দেন। এ জন্য ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর আওতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে দুদক। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। ওই সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে তার দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করা হয়।
তিনি আরও জানান, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে শেখ হাসিনা নিজ নামে অর্জিত কৃষি জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৫০ একর উল্লেখ করেন। এর মধ্যে ক্রয় করা জমির অর্জনকালীন আর্থিক মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে পাওয়া তথ্যানুযায়ী শেখ হাসিনার নিজ নামে অর্জিত ২৮ দশমিক ৪১১ একর জমির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তার ক্রয় করা জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। সে অনুযায়ী তিনি হলফনামায় ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেন এবং ক্রয় করা জমির মূল্য ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকা কম দেখানোর মাধ্যমে হলফনামায় অসত্য তথ্য দেন।
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের সংসদ সদস্য পদের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে (গাড়ি আমদানির এলসির বিপরীতে ব্যাংক থেকে পরিশোধিত মোটে ১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা) একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করেন। সেখানে নিজ আবাসিক ঠিকানা সুধা সদন, বাড়ি নম্বর-৫৪, রোড নম্বর-৫, ধানমন্ডি, আবাসিক এলাকা, ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করেন। গাড়িটি রেজিস্টেশন করেন এবং নিজে ব্যবহার করেন। প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আয়কর নথি কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তার হলফনামায় আলোচ্য গাড়িটির বিষয়ে কোনও তথ্য উল্লেখ নেই এবং তিনি কখনও তা ব্যবহারও করেননি বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দুদক বর্ণিত তথ্যেরর আলোকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ এর আওতায় হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার বিষয়ে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারে অনুরোধ করছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই তদন্ত রাজনৈতিক কী-না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমাদের শিডিউলে রাজনৈতিক ইস্যু একেবারেই নেই। নির্বাচন কমিশনে একরকম হলফনামা দেবে, দুদকে একরকম সম্পদের হিসাব দেবে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নেই। গত ৬ মাস ধরে দুদকে দায়িত্ব পালন করছি, এ সময়ে রাজনৈতিক চাপ পাইনি।
শেখ হাসিনার প্লট জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত অগ্রগতির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, প্লট জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অন্যান্য তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৮ মে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়েই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।