শিক্ষা ডেস্ক:
ছাত্রদলের ৫৯৩ নেতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বহিষ্কার চেয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, শিবিরের হল কমিটি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া যারা গুপ্ত রাজনীতি করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও দাবি জানান তারা।
ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা ঘিরে হল পলিটিক্সের বিরুদ্ধে শুক্রবার মধ্যরাতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাত সাড়ে ১২টায় রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভেঙে বিক্ষোভ করে বেরিয়ে আসে। এরপরই সবগুলো হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
রাত ২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বিক্ষোভস্থলে এসে জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই হলে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বহাল থাকবে। এই নীতিমালার অধীনে স্ব স্ব হল প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।
রাত তিনটার দিকে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, হলে সব ধরনের প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। পরে ছাত্ররা তার দাবি মেনে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে থাকেন।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এরই সূত্র ধরে প্রক্টর জানান, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাইয়ের ঘোষণা অনুযায়ী হল পর্যায়ে সকল প্রকার প্রকাশ্য এবং গুপ্ত ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ডাকসুর প্রচারণা করার ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলো কীভাবে কাজ করবে সেটি নিয়ে তারা আলোচনা করবে।
জানা যায়, ছাত্রদলের ১৮টি আবাসিক হলে মোট ৫৯৩ জন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সর্বোচ্চ ৬১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৫১ জন, কবি জসীমউদ্দীন হলে ৪৩ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৪৭ জন, বিজয় একাত্তর ও শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৫৪ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৫৬ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১৮ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ৩৮ জন, জগন্নাথ হলে ৩৪ জন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ৪৮ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৬ জন, অমর একুশে হলে ২৫ জন, রোকেয়া হলে ৮ জন, শামসুন্নাহার হলে ৫ জন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৪ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৩ জন এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে ৭ জন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী তাসলিমা সুলতানা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই লেজুভিত্তিক দলকানা শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে এবং একাডেমিক পরিবেশ ধ্বংস করেছে। এ ধরনের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে।”
অন্য এক শিক্ষার্থী মামুন ইসলাম খান বলেন, “হলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি সরাসরি নিষিদ্ধ করা উচিত। যার রাজনীতি করার ইচ্ছা, সে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে করুক, কিন্তু আবাসিক হলের ভেতরে নয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় অনেক শিক্ষার্থী মারা গেছে, কেউ অঙ্গহানি হয়েছে, অনেকে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছে। আমরা আর এমন পরিবেশ চাই না।”
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মুন্নি বলেন, “হলে নোংরা রাজনীতি গণরুম, গেস্টরুম ও কৃত্রিম সিট সংকট তৈরি করে। শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে হলগুলোকে টর্চার সেলে পরিণত করে। এত জীবন উৎসর্গের পরও কেনো এই রাজনীতি ফিরবে? আর কত জীবন দিতে হবে হলে রাজনীতির থাবা বন্ধ করার জন্য?”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতিটি হলে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো হবে এবং নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
সাব্বির উদ্দিন রিয়ন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্রী সংস্থা, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, বাম সংগঠন, ডান সংগঠন, গুপ্ত-সুপ্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যসহ সকল সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং হলে কোনো সংগঠনের কোনো প্রকার কমিটি, ছোট টিম, বড় টিম, মাঝারি টিম থাকতে পারবে না। ছাত্র শিবিরের পূর্ণাঙ্গ হল কমিটি, গুপ্ত ও ছোট টিমগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাইয়ে সকল আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত (হল প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত) নীতিমালা অনুযায়ী হল পরিচালনা করতে হবে।
“হল পলিটিক্স নিষিদ্ধ থাকবে” উপাচার্যের এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা রাত তিনটার দিকে হলে ফিরতে শুরু করে। প্রতিবেদনটি লেখার সময় রাত ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিক্ষোভ চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।