যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা যখন সহায়তা ও মানবিকতার জন্য হাঁসফাঁস করছে, যখন বিশ্ব রাজনীতি নীরব, যখন পরাশক্তি গুলো অন্ধ, বধির ও বাকহীন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গুলো যখন নিস্ক্রিয় । এদিকে আজ আবারও যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতিতে পযর্ন্ত নগ্ন ভাবে ভোটো দিয়েছে।মানে মানুষ মারা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছে। শিশু হত্যা অব্যাহত রাখতে চাচ্ছে । কিন্তু ঐদিকে গাজায় প্রতিনিয়ত যখন শিশুদের আর্তনাদ ডুবে যায় বোমার শব্দে, তখনই সুইডিশ মানবাধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ তার কণ্ঠে তুলে নেন সেই নীরবদের ভাষা। তিনি অংশ নিয়েছেন একটি সাহসী ফ্লোটিলা অভিযানে, যার লক্ষ্য গাজায় অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো। গ্রেটা সবার চোখে আংগুল দিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন সেখানে। ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি ছোট জাহাজে করে তিনি ও তার সহযাত্রীরা খাদ্য, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট এবং শিশুদের জন্য সহায়তা সামগ্রী নিয়ে ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজার পথে এগোচ্ছেন।
ইতালির সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করা ‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজটিতে ১১ জন প্রো-প্যালেস্টিনীয় কর্মী রয়েছেন, যাদের সঙ্গে আছেন আয়ারল্যান্ডের অভিনেতা লিয়াম কানিংহ্যাম ও ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রিমা হাসান। তারা শিশুদের জন্য খাদ্য, ঔষধ, বিশুদ্ধ পানি কিট এবং কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে গাজায় পৌঁছাতে চান।
এই যাত্রা কেবল মানবিক সহায়তা নয়, এটি এক বিবেকের প্রতিবাদ। অথচ ইসরায়েল বলছে, এটি নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রশ্ন ওঠে শিশুর জন্য দুধ, ময়দা ও ডায়াপার কি হুমকি? নাকি বিবেকের আওয়াজটাই আতঙ্কের কারণ? ।
কিন্তু ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এই জাহাজ গাজার উপকূলে পৌঁছাতে পারবে না। তাদের মতে, এটি নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রশ্ন জাগে একটি জাহাজ, যা কেবল সাহায্য নিয়ে এসেছে, সেটি কার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে?।
গ্রেটা থুনবার্গ কেবল জলবায়ু আন্দোলনে জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত হলেও, তার মানবিক মূল্যবোধের ব্যাপ্তি এখানেই শেষ নয়। তিনি ২০২৪ সালে কোপেনহেগেনে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন, স্টকহোমে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “গণহত্যা” বলেও অভিহিত করেছেন।
গ্রেটার এই যাত্রা কেবল একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়, এটি এক নৈতিক অবস্থান। তার পদক্ষেপ বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয়, ন্যায়বিচার ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য রাষ্ট্র হওয়া লাগে না, মানুষ হওয়াই যথেষ্ট।
এই সময়ে, যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সংকটের মুখে চুপ থাকে, তখন একটি ছোট্ট জাহাজের ওপর ভর করে উঠে আসে একটি বড় প্রশ্ন: “আমরা কি মানবতার পক্ষে দাঁড়াবো, নাকি নিজের সুবিধা রক্ষায় চোখ বুঁজে থাকবো?”
এই সময়ে, যখন রাষ্ট্রসমূহ চুপ থাকে, তখন একজন তরুণীর এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে: পরিবর্তনের শুরু হতে পারে একজন থেকেই। এবং সবাই যার যার অবস্থান থেকেও ভূমিকা নিতে পারে ।
আজকের বৈশ্বিক নেতৃত্ব যখন রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে মানবতা ও মানবিকতা বিসর্জন দিচ্ছে, তখন একজন তরুণী তার সাহস, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন করে চেতনার মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন। এই যাত্রা সফল হোক বা ব্যর্থ তার প্রভাব থেমে থাকবে না। কারণ এটি শুধুই সহায়তার নয়, এটি বিবেকের জাহাজ।
গ্রেটার আগের কর্মকাণ্ডও বলে, তিনি কেবল জলবায়ু নয়, ন্যায়বিচারের পক্ষে। তার এই যাত্রা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
গ্রেটা থুনবার্গ তার ষোড়শী বয়সেই জলবায়ু আন্দোলনে বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিলেন। আজ তার সেই বিবেক জাহাজে চড়ে গাজার দিকে পাড়ি দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো এই জাহাজ কি কেবল গাজাতেই পৌঁছাবে, নাকি বিশ্ব বিবেকেও ঢেউ তুলবে?
~কাওসার আহমেদ, সম্পাদক, তেঁখ বাংলা