ডেস্ক রিপোর্ট:
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীসহ সারা দেশে জনজীবন কার্যত থমকে গেছে। সোমবার দিনভর মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টির এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার বিকাল ৪টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, আগামী বুধবার পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এরপর ২ থেকে ৪ আগস্টের মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫১টি আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পরিমাণ রেকর্ড করা হয়। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে,২০৭ মিলিমিটার। এছাড়া রাঙামাটিতে ১৩০, চট্টগ্রামের আমবাগানে ১২৮, নরসিংদীতে ১০৭, বরিশালে ৯৫, গোপালগঞ্জে ৯২, কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ৮৮ এবং চট্টগ্রাম শহরে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে ৫১ মিমি।
অবিরাম বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ প্রধান সড়ক ও অলিগলি হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। নিচু এলাকায় ঘরবাড়ি ও দোকানে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে কোমর সমান পানি জমেছে অনেক এলাকায়। দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। নোয়াখালীতেও তিন ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়কসহ উপসড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে, যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জনসাধারণ।
এদিকে গত রোববার রাতভর বৃষ্টির পর সকাল থেকেও ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে অফিসগামী মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক ও ফুটপাতের দোকানিরা ভোগান্তিতে পড়েন। গুলিস্তান, ইসলামপুর, নয়াবাজার, চকবাজার, সদরঘাট, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে পানি জমে ব্যবসায়ীদের সমস্যায় ফেলে দেয়। অনেককে ছাতা ও পলিথিন দিয়ে পণ্য ঢেকে রাখতে দেখা গেছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা জানান, মঙ্গলবারও (আজ) সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে; বিশেষ করে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ বলেন, চলতি জুলাই মাসের এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় দেশে ৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে চলমান বৃষ্টির কারণে মাস শেষে বৃষ্টি স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রাজধানীতে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবারও বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
সন্ধ্যায় সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা আমার দেশকে বলেন, মঙ্গলবারও সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ বলেন, বর্ষাকাল হিসেবে সারা দেশেই কম-বেশি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। আজ মঙ্গলবার থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি কমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বাড়তে পারে। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও ভ্যাপসা গরমের দাপট থাকবে।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, আবার থেমে গেলেই ভ্যাপসা গরম পড়ে। এর কারণ বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে।
তিনি আরো বলেন, এবার রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহ ও রাজশাহী অঞ্চলেও কম বৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে এখনো চলতি জুলাই মাসে স্বাভাবিকের ৩ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে।
৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে সেটিকে বলা হয়ে থাকে অতিভারী বৃষ্টিপাত।
অন্যদিকে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ; ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
আবহাওয়াবিদরা জানান, চলতি সপ্তাহে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি কিছুটা কমে যেতে পারে; তবে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।