তানভীর আহমদ তোহা
শ্রেণীহীন সমাজ নির্মাণের জন্য জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেছেন, “শ্রেণীগত আধিপত্য দূর না হলে মানুষের প্রকৃত মুক্তি অসম্ভব।” তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক মানুষের মুক্ত বিকাশই সকলের মুক্ত বিকাশের শর্ত।”
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ থেকে শুধু শেখ হাসিনার(একাত্তরের মুক্তিযুদ্বের অপব্যাখার উপর ভিত্তি করে বিশেষ শোষক শ্রেনী)বিদায় হয়নি; বিদায় হয়েছে আরও অনেক কিছুর। ভারতীয় নিউ-কলোনিয়ালিজমের অবসান, এলিটতন্ত্রের গায়ে জোরালো ধাক্কা, অধিকার ও গোলামির প্রশ্নে রাস্তায় চূড়ান্ত ফয়সালা এসবই ঘটেছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এই অভ্যুত্থান সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর মধ্যে নিজের অধিকার বোঝার এক দুর্বার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। বিশেষ করে মার্কসের ভাষায় বলা যায় যে , সমাজের প্রলেতারিয়াতের একটি অংশের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতার কাঠামো গিয়েছে। যারা কিছুদিন আগেও শীতের মৌসুমে প্রয়োজনীয় জুতাও পরতে পারত না তারাও এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাঠামোতে যুক্ত হয়েছে।
পাশাপাশি, চব্বিশের বিপ্লবের পর সমাজের সব পক্ষের আর্থ–সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশও ঘটছে। সমাজের প্রান্তিক অবস্থান থেকে মর্যাদার সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশগ্রহণের যে সুযোগ এখন সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-৮ আসনে সংসদ নির্বাচনে পদপ্রার্থী ওসমান হাদি তার স্পষ্ট প্রমাণ। হাদি হয়তো স্বতন্ত্রভাবে তার উপস্থিতি জানান দিয়েছেন কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেও মার্কসের ভাষায় প্রলেতারিয়াত অর্থাৎ শোষিত শ্রেণী ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
মার্কসের এত আকাঙ্ক্ষা চব্বিশের বিপ্লবে উপস্থিত থাকলেও, তবু বাংলাদেশের বামপন্থীদের এতে উদযাপন বা উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। এর অবশ্যই একটি কারণ আছে: কারণ হলো চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ইসলামী মূল্যবোধ একটি বড় উপাদান হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এবং বিপ্লব-উত্তর যে সব প্রলেতারিয়াত শ্রেণীর একটা অংশ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে বা ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে আসবে তারা কমবেশি ইসলামী মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল কিংবা তার ওপর স্থির ও অবিচল।
দার্শনিক কার্ল মার্কস এও বলেছিলেন, “ধর্ম মানুষকে শ্রেণীসংগ্রাম থেকে দূরে রাখে।” কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্র-জনতা মার্কসের এই উক্তিকে ভুল প্রমাণ করে ধর্মকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে চব্বিশের শ্রেণীসংগ্রাম করেছে যে সংগ্রাম এক যুগেরও বেশি সময়ের গোলামী থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের বাম পাড়ায় তো রীতিমতো কবরের নীরবতা ;এখন যদি দেশের ‘লাল মাওলানা’ নামে খ্যাত জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বেচে থাকতেন তাহলে হয়তো এই বিপ্লবের মধ্যেই তার প্রিয় স্লোগান ধর্ম, কর্ম, সমাজতন্ত্র খুঁজে পেতেন।
লেখক :প্রধান সম্পাদক ,তেঁখ বাংলা