পলাশী ট্রাজেডি ও জুন মাস নিয়ে ভাবনা

মোহাম্মদ মাহবুব হোসাইন:

২৩ জুন বিশ্ব ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক এবং দুঃসহ বেদনার দিন। আমার রাজনীতি ও সাংবাদিকতা জীবনে যার অবদান কিংবা এই দুই ক্ষেত্রে যিনি আমার শিক্ষক ছিলেন; তিনি হলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক জগতের কিংবদন্তী সাবেক মন্ত্রী জননেতা মরহুম আনোয়ার জাহিদ। যতটা মনে পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট গঠনের বেশ কিছু দিন আগে ৪ জুন ঢাকার পূর্বানী হোটেলে সেই সময়ে জাতিসত্তার অধিকারের প্রশ্নে সাহসী কন্ঠ দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’র অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে জননেতা মরহুম আনোয়ার জাহিদ তাঁর বক্তব্যে বললেন, জুন মাস তাঁর ভাল লাগেনা। জুন মাস আসলেই তাঁর হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন হয়। জুন মাস আসলেই ফ্যাসীবাদী চরিত্রের যে দৌরাত্ম্য তা তাকে তারা করে। তিনি বললেন, এই জুন মাসে বৃটিশ বেনিয়া তৎকালিন শাসকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে হিমালীয়ন উপমহাদেশে ব্যবসা করার অনুমতি লাভ করে।
২৩ জুন ১৭৫৭ ষড়যন্ত্রকারীদের কুটকৌশলে বাংলা বিহার উরিষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব নবাব মির্জা মুহাম্মাদ সিরাজউদ্দৌলাকে র্নিমম পরাজয় বরন করতে হয় এবং তিনি বৃটিশ ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের দ্বারা হত্যার শিকার হন। এরই মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে দু’শো বছরের সাম্রাজ্যবাদী দুঃশাসনের আনুষ্ঠানিক সুত্রপাত ঘটে। এ মাসের ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠিতা লাভ করে। তিনি আরও বললেন, জুন মাস সব সময় আমাদের জাতি সত্তার জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি। যদিও জুন মাসের ১২ তারিখ তাঁর জন্মদিন। তাঁর বক্তব্যের শেষ লাইন উচ্চারনের সাথে সাথে উপস্থিত সবাই হাসিতে ফেটে পরে। মরহুম আনোয়ার জাহিদ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, সর্বশেষ যা ঘটলো ২৩ জুন ১৯৯৬ পলাশীর ট্রাজেডীর যারা খলনায়ক তাদেরই যোগ্য উত্তরসূরী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জাতীয় র্নিবাচনের মধ্যদিয়ে শপথ নিয়ে রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছে।

মরহুম আনোয়ার জাহিদ আজ আমাদের মাঝে নেই । অথচ তাঁর জুন মাস সংক্রান্ত ঐতিহাসিক কথাগুলো আজও স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে।আর ভাবি তাঁর কাছে জুন মাস কেনো ভাল লাগতো না। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর জুন মাস ভাল না লাগার অন্যতম কারন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে ।পাকিস্তান আমলে ২৩ জুন পলাশী ট্রাজেডী দিবস অত্যন্ত ঘটা করে পালিত হতো। স্বাধীনতা উত্তর তা ঐভাবে দেখা যায়নি। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় কিছু সামাজিক সংগঠন ও জাতীয় নেতা, জাতীয় নেতা মরহুম শফিউল আলম প্রধানের সংগঠন জাগপা পলাশী দিবসকে নিয়মিত পালন করে আসছে।আগষ্ট ও সংহতি বিপ্লবের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠন প্রজন্ম’৭৫ নব্বই দশকের শুরুতে বাহাদুর শাহ পার্কে একটি স্থায়ী “পলাশীমঞ্চ”প্রতিষ্ঠার দাবীও জানিয়েছিল। অভিজ্ঞ মহল মনে করে পলাশী ট্রাজেডীর শিক্ষা আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে, তারা দেশের জাতীয় সংহতি ও স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে অধিকতর চেতনাদীপ্ত হবে।

আজকের এ দিনে পলাশী ট্রাজেডীর শিক্ষা নিয়ে স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গনতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই ।

লেখক: সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

Share